মঙ্গলবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৮

গল্পবৈঠক - ২২, একটি প্রতিবেদন

ছবিঃ নন্দিনী সেনগুপ্ত
৮শে শ্রাবণ, ১৪২৫ এর এক বর্ষা বিকেলে এবারের ‘গল্প বৈঠকের’২২ তম আসরটি বসেছিল লেখক কণা বসু মিশ্রের বাড়িতে। মনের তাগিদে সংসারের সব কাজ অকাজ সামলে মেয়েরা অনবরতঃ যে লিখে চলে বা গল্পের বুনোটে নিজের গোপন অনুভুতিটুকুর জন্ম দেয় তারই রেশ পাওয়া গেলো এবারের বৈঠকেও। এবারের বৈঠক শুরু হলো আমন্ত্রিত গল্পকার উর্মি দাসের ‘চাবি’ গল্পটি দিয়ে। সাইবার ক্যাফেতে ধুলোর পরত জমে থাকা একটি কমপিউটারের আত্মজীবনী। ঝরঝরে গদ্যে,বিষয়বস্তুর নতুনত্বে গল্পটি একটা অন্য জায়গায় পৌঁছে দেয় যেন। দ্বিতীয় গল্প সোনালী মুখোপাধ্যায়ের ‘মায়াবনবিহারিনী’। মা মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে বলা এই গল্প অসম্ভব সুন্দর একটা মোড়ে দাঁড় করিয়ে দেয় আমাদের। মেয়ের সঙ্গে তার প্রেমিকের আড়ালে থাকা মায়ের কথপোকথন গল্পটিকে একটা অন্য উত্তরণে নিয়ে যায়। পরের গল্প জয়া চৌধুরীর 'লোকটা’।একজন বৃদ্ধ মানুষ ও তার দুই পুত্রের জীবনবোধের কাহিনী জয়ার লেখায় সুন্দর ফুটে উঠেছে।পরের গল্প কৃষ্ণা দাসের ‘আবর্ত’। রোজ পার্কে দেখা হওয়া দুজন প্রবীন প্রবীণার আটপৌরে একাত্বীত্বের কাহিনী তার গল্পে চমৎকার বলেছেন কৃষ্ণা। বড়ো মন ছোঁয়া গল্প। পরের গল্পটি আইভি চট্টোপাধ্যায়ের ‘ব্যাঙ্ক’।ব্যাঙ্কের একজন চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীর জীবন যুদ্ধের কাহিনী, যে অবসর সময়ে মেয়ে সেজে যাত্রাপালা করে।পরবর্তীতে জীবনে উচ্চ প্রতিষ্ঠিত পুত্রদের লজ্জা হয়ে দাঁড়ায় বাবার এই বিটিছ্যেলা সেজে অভিনয় করা।করুণরসে সিক্ত এই গল্প শেষে গিয়ে যেন অন্য মাত্রা পায়। নন্দিনী সেনগুপ্তের স্বপ্ন গল্পে  অণুলেখার সঙ্গে কে চ‍্যাট করছিল? তার স্বামী সুবীর, নাকি অন‍্য কেউ? অণুলেখার এক মানসিক দোলাচলে শেষ হয় গল্পটি।বাস্তবের উপর ভিত্তি করে লেখা গল্পটি খুব মন কাড়া। এরপর কস্তুরী চট্টোপাধ্যায়ের ‘বাজি’। সারাদিন ফেসবুক চ্যাটের মাধ্যমে দুই অসম বয়সীর প্রেম কৌতুক দিয়ে শুরু হয়। সাতান্নর জয়দীপ দুরুদুরু বক্ষে একদিন দেখা করতে যায় একুশের রিয়ার সঙ্গে। ভুল ভাঙ্গে অপত্যস্নেহে যখন দেখে রিয়া তাঁরই ভাবী পুত্রবধু।কিছুটা কৌতুকের ঢং এ লেখা গল্পটি কিছুটা চেনা কিছুটা অচেনা একটা মিষ্টি ছাপ রেখে যায়।পরের গল্প দীপা চ্যাটার্জির ‘আলতা বুড়ি’। বিধবা হিরন্ময়ী সধবা সেজে বাড়ি বাড়ি আলতা পড়িয়ে চারটি পেট চালায়। শেষ ট্রেনে আবার বিধবার বেশ  পরে ঘরে ফেরে রোজ।দৈনন্দিন জীবনের এই করুণ কাহিনীর রেশ গল্প শেষ হওয়ার পরেও যেন প্রাণ ছুঁয়ে রয়ে যায় আমাদের পাঁজরে। এরপর ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের ‘সঙ্গীত নন্দন’ গল্পটিও কিছুটা অসম বয়সীর ভারচ্যুয়াল প্রেমের উপর দাঁড়িয়ে।স্বামী সন্তান ছেড়ে আসা বিবাহবিচ্ছিন্না একজন মধ্যবয়সী একা মায়ের বয়সে অনেক ছোট অনীশের সঙ্গে অদ্ভুত এক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।এই সম্পর্কের যোগসূত্র ছিল গান।ভুল ভাঙ্গে যখন সেই মা দেখে অনীশের গায়িকা প্রেমিকা আর কেউ নয় তারই মেয়ে।বড়ো সুন্দর একটি গল্প বুনেছেন ইন্দিরা। বৈঠকের শেষ গল্পটি পড়লেন বুবুন চট্টোপাধ্যায়।’দিদিয়া’ নামের দুই বোনের এই গল্পের বিষয়ে নতুনত্ব আছে। বড়ো দিদির প্রেমকে হালকা ভাবে নেওয়া ছোট বোনের অনুভুতি ধাক্কা খায় যখন দেখে তার দিদিয়া পোলিও আক্রান্ত প্রেমিককে প্রগাঢ় ভলোবাসায় জড়িয়ে রেখেছে। ঝরঝরে গদ্যে সুন্দর গল্প লিখেছেন বুবুন। এবারের বেশীর ভাগ গল্প ছিল ভারচ্যুয়াল প্রেম কেন্দ্রিক। প্রতিটি গল্প মন শুনে গল্পগুলি নিয়ে সুঠাম আলোচনা, সুন্দর সুচিন্তিত মতামত দিয়েছেন এদিনে অতিথি বাংলা সাহিত্যে কৃতি ছাত্রী কবি প্রমিতা ভৌমিক ও লেখক বুবুন চট্টোপাধ্যায়। তাদের অকুন্ঠ ধন্যবাদ অবশ্য প্রাপ্য।
এদিনের গল্পবৈঠকের উপরি পাওনা ছিল তপশ্রী পালের গান। অনবদ্য একটি বর্ষার নজরুল গীতি গাইল সে। আর গাইল একটি ভজন। আর শেষ পাতে ছিল কণাদির তুমুল আতিথেয়তায় জমজমাট খাওয়া দাওয়া।

ছবিঃ নন্দিনী সেনগুপ্ত

অনুষ্ঠানের রিভিউ লিখেছেন 
কস্তুরী চট্টোপাধ্যায়