কী ?

‘গল্প বৈঠক’ এক কথায় কিছু গল্পকার, সাহিত্যিক, লেখক বন্ধুদের চাঁদের হাট। এটি কোনও একক প্রয়াস নয়। আমাদের শহরে কবিতাপাঠের প্রচুর অনুষ্ঠান হয় কিন্তু ছোটগল্প বা অণুগল্প পাঠ হতে তেমন একটা দেখিনা। অনেকেই আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে তার নিজের হাতে সৃষ্টি করে চলেন নিটোল গল্প । সকল লেখকের সৃষ্টিশীলতা তো শুধু পুঁথি বন্দই হবার জন্য সৃষ্টি হয়না।  অথচ গল্পকারদের অদম্য সৃষ্টিশীলতা অব্যাহত থাকে। তাই শ্রুতিতেও তাঁদের সৃষ্টির আনন্দ যাতে ভাগ করে নেওয়া যায় সেই কারণে এই গল্প বৈঠক। সব গল্পকারদের এক ছাদের নীচে আনাই শুধু গল্প বৈঠকের উদ্দেশ্য নয়। গল্পকারদের মধ্যে একটি বন্ধুত্ব পূর্ণ সৌহার্দ্য এবং প্রীতির বন্ধন থাকাটাও কিন্তু বাঞ্ছনীয়। প্রতিযোগিতার দৌড়ে সকলেই ছুটেছেন আজ কিন্তু সহযোগিতা? এই শব্দটি বোধহয় শীঘ্রই অভিধান থেকে মুছে ফেলতে হবে। তাই আর দেরী নয়, এবার হাতে হাতে ধর গো! 

ছবিঃ নিলয় কান্তি বিশ্বাস


এ বছর (২০১৬) মার্চ মাস নাগাদ অনুজ প্রতিম চিত্রশিল্পী বন্ধু নিলয় কান্তি বিশ্বাস ও লেখক দিদি শ্রীমতি ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের আহ্বানে ‘গল্প বৈঠকে’র বীজ বপনে আগ্রহী হই এই অধম অয়ন চৌধুরী । কিছুদূর কথা এগোয় । শিল্প সাহিত্য বিষয়ে তিনজনের কিঞ্চিত অভিজ্ঞতা ছিল ঠিকই । কিন্তু রেস্ত ? কোনও স্পনসর নেই, নেই সে অর্থে পৃষ্ঠোপোষক । আর টাকা দিতে এলেই হাত পেতে নিতে হবে তার তো মানে নেই । বিশেষ করে যতক্ষণ না নিজেদের প্রমাণ করতে পারছি সবার সামনে । তবে আমরা একা ছিলাম না সব সময় অগ্রজ প্রতিম লেখক বন্ধু শ্রী রজতশুভ্র ব্যানার্জী সাথে ছিলেন। একান্তে উত্সাহ দিচ্ছিলেন অগ্রজ প্রতিম ব্লগার, অধ্যাপক পৃথ্বিশ মুখোপাধ্যায় । 

এমন দিনও গেছে আমরা নোংরা সিঁড়ির ধুলো ঝেড়ে প্রথম মহড়া দিয়েছি দক্ষিণাপনের চত্তরে । সেদিন সাথে ছিলেন আরও দুজন, কবি ও লেখক শ্রীমতি নিবেদিতা ঘোষ মার্জিত ও গল্পকার শ্রী অতনু প্রজ্ঞান বন্দ্যোপাধ্যায় ।
কিছু একটা গড়ে তোলার পর, সে সম্বন্ধে মানুষের আগ্রহ, প্রতিক্রিয়া এবং অবশ্যই মতামতের ওপর নজর চলে আসে মূল কারীগরদের । এটা ঠিক না ভুল তা বিচার্য বিষয় হতে পারে কিন্তু অনস্বীকার্য ।
এই অবধি পড়ে যাঁরা ভাবছেন আমাদের দু:খবিলাস শুনে আপনাদের লাভ কী, তাঁদের বলি এটি দু:খ বিলাস নয়, এটি আমাদের পথের পাঁচালী । সূচনা পর্ব থেকেই আমাদের একটি ইচ্ছে আছে । 

অন্যান্যদের মত ‘আম্মো পারি গপ্পো বলতে’দের দলে ‘গল্প বৈঠক’ নাম লেখাবে না । সে নির্বাচিত যোগ্যতমদের জন্যও যথা সাধ্য করবে । যোগ্যতম শব্দটি এখানে তাত্পর্যপূর্ণ । কারণ দর্শক স্টেডিয়ামে নেমে ফুটবল খেলা শুরু করলে তো আর সেথা ফুটবল ম্যাচ হয় না । ফুটবল ম্যাচে থাকেন দুই দলের বাছাই করা বাইশ জন । অনেকে সাইড লাইনে অপেক্ষা করেন । কিন্তু ম্যাচটি উপভোগ করেন সবাই মিলেই । গল্প বৈঠকে এসে গলা ফাটান, হাত তালি দিন, এক সাথে খাবার খান, উত্সাহিত করুন মঞ্চের মানুষদের ।

যোগ্যতমদের নির্বাচনে আমাদের কিছু সূচকের সাহায্য নিতেই হয় । তাতে বিচার্য থাকে আপনি গল্প বৈঠকে কতটা উত্সাহি । নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন কিনা আমাদের সাথে । সাহিত্যে আপনার অনুরাগ কতটা । আপনি জোর করে লিখিয়ে হয়েছেন নাকি সহজাত প্রতিভা । আপনার ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি ইত্যাদি ।

এই সূচকগুলো দর্শক শ্রোতা ও সাধারণ মানুষদের সাথে আলোচনা করেই আমরা অন্তর্ভূক্ত করি ও করব । এবং মূল মঞ্চে কারা যাবেন তার তালিকাটি প্রতি অনুষ্ঠানের আগে আমরাই  তৈরি করি।
কোন রকম ব্যক্তিগত ধরাধরি এখানে অযোগ্যতার পরিচয় হয়ে উঠতে পারে ।

গল্প বৈঠকের পরিচালন পদ্ধতিতে দর্শক শ্রোতা ও অংশগ্রহণকারী বন্ধুদের থেকে যেটা আমাদের প্রথম আশা ও বিচার্য তা হল আপনাদের 'উপস্থিতি', 'উত্সাহ' আর 'উপযোগিতা' এই তিনটি ‘উ’ যেন সবার মধ্যে বজায় থাকে ।


ধন্যবাদ!

২৭শে আগস্ট , ২০১৬