মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

৩৯ তম গল্পবৈঠকের শীত পিকনিক





ছর চারেকের মধ্যে মাত্র ৩৮টি অধিবেশনেই গল্পবৈঠক গল্পচর্চার কেন্দ্র হিসাবে ব্যতিক্রমী হয়ে উঠেছে। নগর কলকাতার মধ্যে নিজেকে সীমাবদ্ধ না নিজেকে রেখে ছড়িয়ে দিয়েছে আশেপাশের জেলায়। বিস্তৃত হয়েছে তার ম্যাপ। 'গল্পবৈঠক' এর হাতে হাত রেখেই উঠে এসেছেন জেলার নবীন এবং প্রবীণ গল্পকাররা। পেয়েছেন গুরুত্বও। ব্যতিক্রমের সেই দৃষ্টান্ত বজায় থাকল ৩৯ নং বৈঠকেও। পিকনিকের আমেজে, মিঠেল শীতের হাওয়া, শীতফুলের পসরা আর রোদ মেখে চমৎকার অধিবেশন পালন হল এবার। গল্পবৈঠকের অন্যতম মুখ ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটের ছাদে, ঘরোয়া পরিবেশে। দিনভর অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে সম্মানিত করা হল 'একান্তর' পত্রিকার সম্পাদক, লেখক অরূপ আচার্যকে, যিনি ও ওঁর পত্রিকা সাহিত্যের আঙিনায় এক ব্যতিক্রমের উদাহরণ। বছরের পর বছর ধরে অন্য ধরনের লেখার পাশাপাশি এ পত্রিকার পাতা থেকেই উঠে এসেছেন সাম্প্রতিক সময়ের বহু নারী লেখক। পত্রিকা ও সম্পাদক সম্পর্কে নিজেদের অনুভব ও স্মৃতিকথার ডালি মেলে ধরলেন ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়, তৃষ্ণা বসাক, বুবুন চট্টোপাধ্যায়, কঙ্কাবতী দত্ত, মধুশ্রী সেন সান্যাল, বিতস্তা ঘোষাল, প্রমুখ। শাল, উপহার, ও সম্মাননা পত্র অরুপ আচার্যের হাতে গল্পবৈঠকের পক্ষ থেকে তুলে দেওয়া হয়। এরপর হল একান্তর উৎসব সংখ্যা প্রকাশ।




দ্বিতীয় পর্বে ছিল অনধিক ২০০ শব্দে অণুগল্প পাঠ । বিষয় ছিল "এক কাপ চায়ে"। চা পান ও তার বিচিত্র মুহূর্ত উঠে এল চন্দ্রানী বসু, সুপ্তশ্রী সোম, ব্রততী সেন, সুস্মেলী দত্ত, মৌসুমী ঘোষ, সঙ্গীতা দাশগুপ্ত রায়, মানসী গঙ্গোপাধ্যায়, তপশ্রী পাল, কাকলী দেবনাথ, নন্দিনী সেনগুপ্ত, নিবেদিতা ঘোষ মার্জিত, শ্যামলী আচার্য, কেকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুজাতা রায়, সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভশ্রী সাহা ও ভজন দত্তের পাঠে। মধুর সঙ্গীত পরিবেশন করলেন অগ্রজ লেখিকা শ্রীমতী কণা বসু মিশ্র। চমৎকার একক অভিনয় করে দেখালেন নাট্য ব্যাক্তিত্ত্ব শ্রী অরূপ আচার্য। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন  মানস সরকার। চমৎকার দ্বিপ্রাহরিক ভোজন আর চলল দেদার আড্ডাও। দূষণভরা শহরে নেমে এল তাজা এক ঝলক হিমেল বাতাস। মহানগরের গল্পকারদের সঙ্গে চুঁচুড়া থেকে চন্দননগর, কল্যাণী থেকে ঝাড়খণ্ড, বাঁকুড়া থেকে কাঁচড়াপাড়া সব লেখকের গল্পে গল্পে একাকার হয়ে গেল সেদিন।

প্রতিবেদনেঃ মানস সরকার 

মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

বইমেলা ২০২০ তে গল্প বৈঠক ৩৮

   
  
ন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা ২০২০ তে এবারে অনুষ্ঠিত হল গল্প বৈঠকের ৩৮ তম অণুগল্প পাঠের আসর। আয়োজক জনস্বার্থবার্তা পত্রিকা এবং প্রকাশনার পক্ষ থেকে লেখক, সাংবাদিক শ্রী চন্দ্রশেখর ভট্টাচার্য। সবাইকে স্বাগত জানিয়ে গল্পকারদের আসন, শব্দের জন্য মাইক্রোফোন ইত্যাদির সুব্যবস্থা করে দিলেন। উপস্থিত ছিলেন মউল পত্রিকার সম্পাদক শ্রী প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ।      
নির্দিষ্ট সময়ে গল্পবৈঠকের কর্ণধার দুই গল্পকার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় এবং তৃষ্ণা বসাক ছোট্ট গৌরচন্দ্রিকা দিয়ে সূচনা করার পর প্রথম গল্প পাঠ করলেন শ্রীমতী ব্রততী সেন দাস। শীতলক্ষ্যা নদী,  গল্পটি দেশ ভাগ এবং বার্ধক্যের অবহেলার বিষন্নতাকে ছুঁয়ে বইল। 
পরের গল্পে সোনালি, নকশাল আন্দোলনের সময়কার তরুণতরুণীদের ভেঙে যাওয়া প্রেম,  জীবন আর আদর্শদের ধরতে চেষ্টা করলেন।গল্পের নাম লাল নীল মাছের বাক্স । 
সমাজের স্থির চিত্র ফুটিয়ে তুললেন, তারপরেই শ্রমণা পত্রিকার সম্পাদক চন্দ্রাণী বসু, তাঁর খোঁজ, গল্পে। এরপর  মৌমিতা ঘোষ, শ্বাশুড়ি এবং বৌমার মাঝে বয়ে যাওয়া লুকোনো হিংস্রতা আর পরের প্রজন্মের ওপর তার প্রভাবকে নিপুণ হাতে লিখেছেন শিক্ষা নামে তাঁর গল্পটিতে । নবীন গল্পকার কাকলি দেবনাথ মেয়েদের পাওয়া না পাওয়ার গল্পে ডিমেনশিয়ার পলির ফাঁকে রাখলেন মনস্তত্ত্ব আর সংসারের ওঠানামা। 
এর মধ্যেই আয়োজকেরা নিয়ে এলেন সুগায়ক শ্রী দাশরথি মন্ডলকে। তিনি ছাপাখানার কর্মী হলেও সুগায়ক। তাঁর একটি গানের সিডি প্রকাশিত হল গল্পকারদের হাতে দিয়ে। বই নিয়ে স্বরচিত একটি মন ভাল করা গানও উদাত্তকণ্ঠে শোনালেন শিল্পী।
চায়ের বিরতির পর হঠাত আগত গল্পকার শ্রী সুব্রত বসু সকলের অনুরোধে পাঠ করলেন একটি স্বরচিত অনুগল্প। তাঁর গল্পের নাম ছিল স্বাধীনতার হীনতায়।  
এরপর অগ্রজা লেখিকা শ্রীমতী সর্বানী বন্দ্যোপাধ্যায়, এরপরে, তাঁর, ফ্রি, গল্পে আজকের ভোগবাদী জীবনের ছবি ফুটিয়ে তুললেন অনায়াসে। সমাজের আরেক নিপুণ চিত্র পরিবেশিত হল, লেখক অমিতাভ দাসের গল্প, টাটকা য়। 
সমসাময়িক রাজনৈতিক টানাপোড়েনের ওপর একটি প্রাসঙ্গিক গল্প শোনালেন শ্রীমতী শ্যামলী আচার্য। গল্পের নাম, কাগজ আর শুভশ্রী সাহার গল্প অস্তিত্ব ও ছিল চমৎকার।  
বিকেলের আলোয় শেষ দুটি গল্প ছিল তপশ্রী পালের  জলছবি এবং ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের  ঘুমপাড়ানি চাউমিন। 
সমাজ, সংসার এবং তার মাঝে মেয়েদের অবস্থান, গল্পের লেখায় ফুটে উঠে সকলের মন ছুঁয়ে গেল। 
বই মেলার এই রোমাঞ্চকর প্রেক্ষাপটে নিজস্ব শব্দদের সাহিত্যপ্রেমীদের কাছে পৌঁছে দিতে পারার আনন্দ মনের মনিকোঠায় সঞ্চয় করে রাখল গল্প বৈঠকের সদস্যরা। সেদিন তৃষ্ণা বসাকের কবিতা পাঠ দিয়ে শেষ হল বইমেলায় গল্প বৈঠকের ৩৮ তম সাহিত্য বাসর। 




লিখেছেন - সোনালি 

মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

গল্প বৈঠক ৩৭ @ পান্ডুয়া


কোনও কোনও দিন হঠাৎ করেই বিশেষ হয়ে ওঠে। এমনই এক বিশেষ দিন ছিল গত ২৫শে জানুয়ারি। 'গল্পবৈঠক 'ও  পান্ডুয়ার ' গ্রাহম বেল সেন্টার ফর ডেফ' এর উদ্যোগে মিলিত হল সাহিত্যের সাথে সমাজ ও জীবনযুদ্ধের গল্প । এই গল্পে নেই কোনও পরাজিত মানুষের কাহিনি। গল্পবৈঠকের ৩৭তম আসরে দশজন গল্পকার অরিন্দম গোস্বামী, কাকলী দেবনাথ, সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়, ইন্দিরা মুখোপধ্যায়, মৌসুমী ঘোষ, ইন্দ্রনীল বক্সী, রাজেশ কুমার এবং রুমকি রায় দত্ত ছাড়াও হাজির ছিলেন দুই খুদে গল্পকার  অনন্বয় গোস্বামী এবং শ্রীপর্ণা  ঘোষ । সবাই স্বরচিত কিশোর গল্প পাঠ করে শোনালেন মূক ও বধির ছাত্রদের । প্রায় অসম্ভব এই অভিনব প্রয়াসকে সম্ভব করে তুললেন, সংস্থার সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ শিক্ষক শান্তনু পাত্র। তিনি গ্রাহম বেল সেন্টারের একজন সক্রিয় কর্মী। এই প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে প্রতিবন্ধী, মূক ও বধির শিশুদের সমাজের মূলস্রোতে রেখে স্বনির্ভর করে তোলার কাজে নিয়োজিত।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় ছোট্ট শিল্পী অনুরাগ রায়ের সুচারু সঙ্গীত পরিবেশনা দিয়ে। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন রুমকি রায় দত্ত।
অনুষ্ঠানের অন্য বিশেষ আকর্ষণ ছিল 'নির্বাক' গ্রুপের মূকাভিনয়। শিল্পীরা প্রত্যেকেই মূক ও বধির । সুরজিৎ অধিকারী, প্রসেনজিৎ হাজরা, বিপুল বৈরাগী, সুরজিৎ সরেন, এই চারজন শিল্পীদের সাবলীল অভিনয় মুগ্ধ করে উপস্থিত সকলকে। অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয় বধির ছাত্রদের সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনে। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে উত্তম মধ্যাহ্ন ভোজনের ব্যাবস্থাও ছিল সাহিত্যিকদের জন্য।



সঞ্চালক, গল্পকার রুমকি রায় দত্ত 

প্রতিবেদনেঃ রুমকি রায় দত্ত