বুধবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৬

শীতকালীন গল্পবৈঠক (১)

ছবি এঁকেছেন মহাশ্বেতা রায়
কবিতা বরাবর বাঙালির মনন কে আকর্ষণ করেছে কিন্তু এই বাংলা জন্ম দিয়েছে অত্যন্ত প্রতিভাবান ও জনপ্রিয় কথা শিল্পীদেরও। আমাদের শহর কলকাতায় কবিতা পাঠের বহু অনুষ্ঠান হয়। কিন্তু গল্পকারদের গল্প পাঠের সুযোগ কই? ২০১৬ সালের মার্চ মাস নাগাদ লেখক শ্রীমতী ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়, চিত্র শিল্পী ও সাহিত্য প্রেমী শ্রী নিলয় কান্তি বিশ্বাস ও শ্রীযুক্ত অয়ন চৌধুরীর উদ্যোগে তৈরি হয় ‘গল্প বৈঠক’। বন্ধুরা এসো গল্প বলি, গল্প করি। সাহিত্যের আড্ডার এক জোট হই সাহিত্য পাগল মানুষজন। এই হল গল্প বৈঠকের উদ্দেশ্য।  পায়ে পায়ে পথ চলে ২০১৬ র ১০ই ডিসেম্বর, শনিবার সন্ধ্যায় সপ্তম গল্প বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়ে গেল আমাদের এই শহরেই, লেখক, কবি বন্ধু শাশ্বতী সরকারের পশ্চিম পুটিয়ারির বাড়িতে। এই দিনের বৈঠকে গল্প পাঠ ছাড়াও একটি বিশেষ আকর্ষণ ছিল। এইদিন সাহিত্যিক বন্ধু শ্রীমতী ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় উদ্বোধন করলেন গল্প বৈঠকের ওয়েবসাইট www.golpoboithok.tk


বাংলা সাহিত্যের উপরে নেমে আসা সমস্ত অশুভ ছায়ার মুখে ছাই দিয়ে টিকে থাকুক গল্প বৈঠক এই ছিল এই দিনের স্লোগান। গল্প বৈঠক কি? কেন এই উদ্যোগ নেওয়া হল, কারা গল্প বৈঠক তৈরিতে অগ্রণী ভুমিকা নিয়েছিলেন, কারাই বা যুক্ত আছেন এর সঙ্গে, কোথায় কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছে গল্প বৈঠক, কারা ছিলেন সেই সব বৈঠকে তার সমস্ত বিবরন পাওয়া যাবে ওয়েবসাইট টিতে। জানা যাবে আগামীর কথাও। সপ্তম গল্প বৈঠকের সূচনা হল  জয়া চৌধুরীর সংস্কৃত শ্লোক উচ্চারণের মধ্যে দিয়ে। বৈঠকে সেদিনের অতিথি ছিলেন গল্পকার ভাস্বতী ব্যানারজী । তিনি পাঠ করলেন তার ‘প্রতিবেশী’ নামক ছোট গল্পটি। অত্যন্ত সংবেদনশীল এই গল্পটি এদিন সবার মন ছুঁয়েছিল। ভাস্বতীর পর মহাশ্বেতা রায়, পেশায় ওয়েব ডিজাইনার ও ছোটদের ই-পত্রিকা ইচ্ছামতীর সম্পাদক  মহাশ্বেতা বুনেছিলেন তার ‘সিন্থিয়া’ অনুগল্প টি। অত্যাচারীর নগ্ন ক্ষমতা প্রদর্শনের ফল কি হতে পারে তার বিবরণ দিয়েছিল ‘সিন্থিয়া’। মহাশ্বেতার পর দক্ষ গল্পকার নিবেদিতা মার্জিত। তার গল্পের ভক্ত না হয়ে উপায় থাকে না কোন। ছয় লাইনের গল্প ‘খুব রাগ করবে’ তে ফুটিয়ে তুললেন কিশোর প্রেমের এক অনবদ্য ছবি। এরপর অধ্যাপক কৃষ্ণা রায়, সম্পূর্ণ অন্য বিষয়, বৃদ্ধ বয়সের বাসনার এক গভীর মনসতাত্ত্বিক  বিশ্লেষণ ধরা পরল তার ‘ঘ্রাণ’ অনুগল্প টিতে। স্যাটায়ারের রাজা পেশায় আর্কিটেক্ট শ্রী রজত শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নেরু দা ও বাগধারা’ মাতিয়ে দিল আসর। হাসির জোয়ারে ভাসতে ভাসতে বৈঠক পৌঁছে গেল  স্কুল শিক্ষিকা পূর্বা মুখোপাধ্যায়ের গল্প ‘লাইক-টাইক’এ। হাল্কা চালে পূর্বা মেলে ধরলেন সোশাল মিডিয়ার তৈরি করা এক বিষাদ কাহিনী। বাঙালির যে কোন চর্চাই পেট পূজো ছাড়া অসম্পূর্ণ। হোস্ট শাশ্বতী ও তার স্বামী যতীন বাবু সকলের সুবিধার্থে রাশি রাশি সুখাদ্য পরিবেশনের দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছিলেন। আমরাও ‘আর না, আর না’ বলে চালিয়ে গেলাম সকলেই। ওয়েবসাইট এর উদ্বোধন হয়েছে তাই এক ফাকে কেক কাটাও বাদ গেল না। উপরি পাওনা ছিল গৃহ কর্তা যতীন বাবুর উদ্দেশ্যে ইন্দিরা দির একটি নিবেদন। যতীন বাবুর নামটি শুনে থেকে বঙ্গ জীবনের অলিন্দে লুকিয়ে থাকা সমস্ত যতীনেরা ইন্দিরা দির মনের মধ্যে উকি ঝুকি মেরে যত দুদিন যাবত তার জীবন কিভাবে যতীন ময় করে তুলেছিল সেই গল্প বললেন তিনি। হাসিতে পেট ফেটে যাওয়ার জোগাড়, উপস্থিত যতীন বাবু লজ্জায় লাল। কিছু করার নেই কে না জানে ক্রিয়েটিভ লোকজন একটু পাগল হয়। সজ্জন যতীন বাবু ক্যামেরার  আড়ালে লুকিয়ে বাঁচলেন। সারাক্ষণ  বৈঠকের ছবি তুলে গেলেন তিনি ও তার দুই মেয়ে শ্রীরুপা ও শ্রীতমা। 
 
ছবি তুলেছে শ্রীতমা ও শ্রীরূপা

পূর্বার গল্পের পর এই অধম গার্গী রায় চৌধুরীর  অনুগল্প ‘চেয়ার’,  সেক্টর ফাইভের টেঁকি অতনু প্রজ্ঞ্যান বন্দ্যোপাধ্যায়ের  গল্প ‘জামওয়ালি’,  চিকিৎসক সোনালি মুখোপাধ্যায়ের অনুগল্প ‘অনায়াস’, লেখিকা ইন্দিরাদির ‘মেটামরফোসিস’, বুবুন চট্টোপাধ্যায়ের ‘মিসড কল’ ও শাশ্বতীর গল্প "আত্মরতি"  পরিবেশিত হল। প্রতিটি গল্পেই ছিল বিষয়ের বিচিত্রতা। স্প্যানিশ অনুবাদক জয়া পড়ল স্প্যানিশ থেকে অনূদিত গল্প ‘আমার প্রতিবিম্ব’। তিন ঘন্টা কেটে গেল আনন্দে, মনন চর্চায় ও পারস্পরিক আন্তরিকতায়। এইদিন গল্প বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি যে সব সাহিত্যিক বন্ধুরা তাদের কথাও উঁকি মেরে গেছে এদিনের বৈঠকে কোন না কোন লেখক বন্ধুর কথায়। উপস্থিত অনুপস্থিত সবাই কে নিয়ে তাই পরিপূর্ণ ছিল সপ্তম গল্প বৈঠক।  

গার্গী রায় চৌধুরী 

 

বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৬

বিজয়ার গল্পপাঠ


দুর্গাপুজোর পরেই গল্পপাঠ অনুষ্ঠান হল ভবানীপুরে কবি যশোধরা রায়চৌধুরীর বাড়ীতে। 
কেমন যেন ফিরে পাওয়া কলেজ-ইউনিভার্সিটির দিনগুলো। সেখানে পড়াশুনোর চাপমুক্ত মধ্যবয়সী আমরা মানে গল্পকার, কবি, ঔপন্যাসিক বন্ধুবান্ধবরা। উত্সবের শেষের মনখারাপের হাওয়া উড়িয়ে নিয়ে গেল এক নিমেষে ভবানীপুরে যশোধরার মা মানে শ্রদ্ধেয়া শ্রীমতী অরুন্ধতী রায়চৌধুরীর পুরণো বাড়িতে। বিকেলেই "মেঘ না চাইতে জল" সাপ্তাহিক বর্তমান পত্রিকার সম্পাদক, বলিষ্ঠ গল্পকার জয়ন্তদার ফোন। ফেসবুকে দেখে স্বতোপ্রণোদিত হয়ে আসতে চেয়েছিলেন যিনি শ্রোতা হয়ে। কি আনন্দ! সিঙ্গারার দোকানে লাইন। কারণ বিজয়া। গাড়ির জ্যাম কারণ কালীপুজোর প্যান্ডেল। যশোধরার ফোন" কোথায় তুমি?" বললাম, এই তো জয়া আর শর্মিষ্ঠা আমার সাথে, যাচ্ছি। শর্মিষ্ঠা বেচারী রায়গঞ্জ থেকে ছুটে এসেছে গল্পপাঠ করার জন্য। নিবেদিতার ফোন" ও ইন্দিরাদি, আমি এসে গেছি, তোমরা?" তারপরেই পৌঁছে গেলাম যথসময়ে। রজতশুভ্রদার সহধর্মিণীর নিপুণ হাতে বানানো গন্ধরাজ স্যান্ড‌উইচ....আহা কি খেলাম! গার্গী-বুবুন শ্রীহরির ল্যাংচা নিয়ে প্রবেশ।  ডাঃ সোনালী তার ব্যস্ত হাসপাতাল শেডিউল সামলে এক ব্যাগ নিষিদ্ধ ভাজাভুজি নিয়ে হাজির তখন। অরে চলে এসেছে তো সকলেই... খোলা চুলে শাশ্বতী সরকার....আমাদের চেয়ে একটু ছোট কিন্তু কবিতা লেখে বেশ। পূর্বা এল ব্যস্ত সমস্ত হয়ে...একটু কিন্তু কিন্তু কারণ একটু দেরী, আধটু টেনশন..কারণ সাজুগুজু, ডেবিট কার্ড বেত্তান্ত...ব্লা, ব্লা, ব্লা...তারপরেই ইচ্ছামতীর সম্পাদক মহাশ্বেতা...ওয়েব ডিজাইনিং যার নেশা ও পেশা.....মন্দ লেখেওনা সে। আর এলেন বলিষ্ঠ গল্পকার  তৃষ্ণা বসাক। সকলেরি হাতে একটা করে ঝোলা। বিজয়া বলে কতা! আর আমাদের হোষ্ট মানে যশোধরা শুধু এঘর আর ওঘর...লিকার চায়ের জল চাপায়...চা ফুরায়....আবার ধোঁয়া ওঠে...আবার চা....এবার থামবি তোরা? আমাকে ল্যাপটপ খুলে এবার গল্পটা পড়তে দিবি? সকলেই স্বরচিত অণুগল্প শুধু অনুবাদক জয়া স্প্যানিশ অনুবাদ...আহা বড়ো ভাল বিদেশী প্লট! নিবেদিতা তার নিজের গাঁমানে পুরুলিয়ার ডায়লেক্টে খাসা লেখে আর পড়েও দারুণ! আরে এতো এক সে বড় কর এক! আমরা বাপু মঞ্চ, হল, মিডিয়ার ক্যামেরায় বিশ্বাসী ন‌ই। আমাদের দেখনদারি বড্ড আটপৌরে। আমাদের গল্পের আড্ডাটাই প্রধান। আর লাইট-একশান-ক্যামেরার মেকি আভিজাত্য নাই বা থাকল গল্পবৈঠকে। প্রকৃত অর্থে সাহিত্য ঝড় তো উঠল কাল। চলতেই থাকবে সে ঝড়। কারণ আমাদের একটাই কমন কেমিষ্ট্রি আছে। তা হল "বাংলা ভাষা" । আমরা সাহিত্য করে এইটুকুই পাই। আমাদের আগের প্রজন্মের রথী মহারথী স্বনামধন্য লেখকরা এই পথ‌ই দেখিয়েছিলেন....সেসব এখন গল্প। এখন শুধু পিঠ চাপড়ানি, দেখনদারি আর হিংসাহিংসি। সেটুকু নেই মনে হয় এই নিখাদ গল্পবৈঠকে। আর ছিল গানও। শুনেছি গান আর খ্যাঁটন ছাড়া নাকি সাহিত্যবাসর সম্পূর্ণ হয়না। সুনীলদা, বুদ্ধদেব গুহ তাই বলতেন।



কালের কষ্টিপাথর পত্রিকার প্রতিবেদন 

একটু বেশী আনন্দ পান করলাম। বুকের ভেতরের আকাশ টা আরও বেশী নীল হয়ে গেল। মেঘ করেছিল খুব। ফুস করে উড়ে গেল।দশভুজা দিদি ডাক দিয়েছে “সেই কোন সকালে”। যেদিন থেকে ডাক সেদিন থেকে দিন গোনা।
কাল গল্পবৈঠকে গিয়েছিলাম। যারা খুব দামী ভাষা ব্যাবহার করেন তারা লিখবেন, ঋদ্ধ হলাম, সমৃদ্ধ হলাম। আমি খুব আনন্দ পেলাম।
রজত দার গল্প যারা শুনেছে তারা ফ্যান হয়ে যায়... আমি ১ নম্বরের। যেমন মজার তেমন উপস্থাপনা।
আমি পড়লাম আমার মুর্শিদাবাদের ভাষায় লেখা একটা শাস বহু কাহানি।
সোনালী দি চিকিৎসক মানুষ... কবিতা লেখেন আর বললেন ঘোর বাস্তব একটি গল্প।যেটা যে কোন মানুষের মনন কে একটু নাড়িয়ে দেবে।
শর্মিষ্ঠা বললেন অপূর্ব এক গল্প।সাথে গাইলেন “বিশ্ব সাথে যোগে যেথায় বিহার”।
জয়া স্প্যানিশ ভাষার একটি অনুবাদ গল্প পড়লেন...একটু গা শির শির করা। আর গাইলেন ঐ ভাষার একটি গান। বেশ শুনতে। (তবে ওর গলায় যে মালাটা ছিল সেটা নিয়ে আমি ওকে কিচ্ছু বলিনি । মা কালীর দিব্যি।)
বুবুন চট্টোপাধ্যায় । নামটায় যথেষ্ট।মা আর সন্তানের এক অদ্ভুত দোলাচলের গল্প ।আমাকে ভাবাল।
গার্গী রায়চৌধুরি । আধুনিক ধনী নাগরিক জীবন আর তার ভয় আর স্বপ্ন নিয়ে এক অসাধারন লেখা... মজার ...আবার ... ভাবনার।
শাশ্বতী আমার খুব চেনা কবি। একটা কবিতা ঘেঁষা গল্প বলল।সুন্দর।
পূর্বা দি... গল্পের আগেই গোটা ছয়েক মজার কথা, গল্প বলে দিয়েছে। কিন্তু যেটা বলল। মানে পড়ল সেটা থেকে নেমে এলো আধুনিক টিনএজ সমস্যার উদ্ভ্রান্ত অবস্থা। দারুন।
তৃষ্ণা বলেন একটি অদ্ভুত লেখা। আমি সব্বাই কে বলবো “কালের কষ্টি পাথর”নামের ম্যাগাজিন টি থেকে পড়তে। “উকুন” । ফাটাফাটি।
ইন্দিরা দি। যার লেখার অপেক্ষায় ছিলাম সেদিন। একটা অন্য রকম সৃষ্টি। গল্প নরম হয়ে কবিতা হয়ে গেল । নাকি কবিতা হঠাৎ গদ্য হয়ে গেল।শিখলাম।
মহাশ্বেতা আমার বন্ধু । ওর মতোই ওর ইছছামতি কে বড্ড ভালোবাসি। ও পড়ল ছোট্ট দুটো গল্প। ভারী মিষ্টি।
যশোধরা রায়চৌধুরী। উনি একহাতে চা করছেন। আমাদের গল্প শুনছেন। অসাধারন মনন।আর যশোধরা দিদির গল্প। উহ। তিন টে পরমাণু বোমা। এতো ভালো। আর বিষয় বৈচিত্র।
আমি কাঙালের মতো গিয়ে রাজার মতো ফিরলাম।
ধন্যবাদ দিলে বড্ড কম দেওয়া হবে। আমি সারা জীবনে এমন আনন্দ পাইনি।

নিবেদিতা ঘোষ মার্জিত 
 

বর্ষ বরণের গল্পপাঠ

বাংলা নতুন বছর ১৪২৩ এর সূচনায়  বাংলাভাষার অনুরাগীদের জমায়েত, আড্ডা, হৈ হৈ আর সেই সঙ্গে স্বরচিত অণুগল্প পাঠ অনুষ্ঠান এর মধ্যে দিয়ে "গল্পবৈঠকের" বর্ষবরণ এবং সেই সাথে ই-প্যাপিরাস প্রকাশ হয়েছিল। গরম কোথা দিয়ে উধাও সেই সন্ধ্যেবেলায়। নানান স্বাদের গল্প শোনা হল। উপস্থিত ছিলাম আমরা সকলে। অয়ন চৌধুরীর সঞ্চালনা প্রশংসার দাবী রাখে। স্বরচিত গল্পপাঠে সকলেই বেশ সাবলীলতার পরিচয় দিলেন । সুদূর সাওপাওলো থেকে হাজির রন্ধন পটীয়সী, ব্লগার চৈতালি চ্যাটার্জী তার সদ্য প্রকাশিত ভ্রমণকথা পাঠ করে শোনালো। গরম কোথা দিয়ে কেটে গেল বুঝতেই পারিনি আমরা। ইচ্ছামতী ই-পত্রিকার সম্পাদক ও ওয়েব ডিজাইনার মহাশ্বেতা রায় উপস্থিত ছিলেন । এরা অনেকেই প্যাপিরাস ই-পত্রিকার লেখক। তাদের সামনেই ডিজিটাল প্যাপিরাস পত্রিকার প্রকাশ অনুষ্ঠান হল যথাসময়ে।

প্রাক পুজো গল্পপাঠ

দক্ষিণ কলকাতা শরতসমিতির আয়োজনে শরতচন্দ্রের বাসভবনে "গল্পবৈঠকের" ষষ্ঠতম ছোটগল্প পাঠ অনুষ্ঠান হয়েছিল দুর্গা পুজোর ঠিক আগেই । শরতচন্দ্রের জন্মমাস তাই গল্পের বিষয় ছিল "মেয়েদের গল্প"। আর স্বরচিত গল্পপাঠ করলেন পাঁচজন বর্তমান প্রজন্মের লেখক আর দু'জন অনুবাদ গল্প পড়লেন। সমবেত উদ্বোধনী সংগীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হল আর সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করলেন বুবুন চট্টোপাধ্যায়। সাহিত্যিক কণা বসু মিশ্র সাহিত্য নিয়ে, গল্প নিয়ে স্মৃতিচারণা করলেন খুব সাবলীলভাবে। আর বর্তমান প্রজন্মের লেখক তৃষ্ণা বসাক সুন্দর আলোচনা করলেন বাংলা ছোটগল্পের সেকাল ও একাল নিয়ে। একক সংগীতে সঞ্চারী চক্রবর্তী বেশ দক্ষতার পরিচয় দিলেন তাঁর মিষ্টি কন্ঠস্বর নিয়ে। গল্পের ফাঁকে ফাঁকে গান আর সবশেষে সমবেত সংগীতে বেশ আনন্দ মুখর হয়ে উঠল পুরো সন্ধ্যেটা। শরতবাবুর বাসভবন ভর্তি ছিল মানুষের সমাগমে। সেটাই গল্পবৈঠকের পরম প্রাপ্তি। 


চৈত্রের গল্পপাঠ

চৈত্রের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে গল্পবৈঠকের দ্বিতীয় উপস্থাপনা ছিল উত্তরপাড়ার জীবনস্মৃতি ডিজিটাল আর্কাইভের অনবদ্য গ্যালারীতে। নামীদামী দুষ্প্রাপ্য ছবির প্রদর্শণী চলছিল সেখানে । জীবনস্মৃতির কিউরেটর অরিন্দম সাহা সর্দারের আমন্ত্রণে কবিতায়, গানে ও গল্পপাঠে হাজির ছিলেন কয়েকজন। শুরুতে বক্তব্য রাখলেন দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়। বাংলা ব‌ইয়ের গাল্পের সাথে ইলাস্ট্রেশান এর ক্রম বিবর্তনের স্লাইড শো টি ছিল অনবদ্য। মধ্যিখানে ছিল গল্পবৈঠকের অনুষ্ঠান। আর সব শেষে বিরাট প্রাপ্তি ভালোপাহাড়ের স্রষ্টা কমল চক্রবর্তীর স্বতঃস্ফূর্ত বক্তব্য।



ফোকাস নিবেদিত জীবনস্মৃতির সব অনুষ্ঠানের মত‌ই গতকালকেও ছিল শিল্পীবরণ। হাতে লাল সূতোয় বাঁধা একগুচ্ছো দুব্বোঘাস, কপালে আবীরের ফোঁটা, হাতের তালুতে একমুঠো রক্তকরবী, আর সাথে ওরিগ্যামির লালপাখী। আর তারপরেই গ্যালারীর কোনো এক কোণা থেকে বেজে উঠল বিশেষ এক শব্দের অণুরণন। শুরু হল সঞ্চালক অয়নের কথা। বেশ প্রোফেশানাল ছোঁয়া আছে কথায়। অনুষ্ঠানের নাম "তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা"। ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় আবৃত্তি করলেন রবিঠাকুরের এই গানটি। বর্ণালী কর ধরলেন "আজি এ আনন্দসন্ধ্যা" .. গমগম করে উঠল গ্যালারী। জীবনস্মৃতির সবুজ ও সজীব বাঁচানোর থিমটি আজকের যুগে প্রশংসার দাবী রাখে। আর গল্পবৈঠকের সেরা প্রাপ্তি তাদের কাছ থেকে পাওয়া এই ফলকটি। সবশেষে ভালোপাহাড়ের সজীব ও সবুজ বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া । ফোকাস নিবেদিত এবং জীবনস্মৃতি আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে গানের ফাঁকে ফাঁকে গল্প পাঠ ছিল বেশ অন্যরকম প্রাপ্তি। সেদিন উত্তরপাড়ার জীবনস্মৃতি সভাগৃহে গল্পবৈঠকের আসরে সবশেষে ভালোপাহাড়ের সজীব ও সবুজ বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে আমরা সকলে হারিয়ে গেছিলাম কিছুক্ষণ । ভালোপাহাড়ের স্রষ্টা শ্রদ্ধেয় কমল চক্রবর্তীর স্বতঃস্ফূর্ত বক্তব্য শুনে আজো স্তম্ভিত হতে হয়।




উনি আরাধনা করেন এক নতুন ঈশ্বরকে যার নাম দিয়েছেন উনি "বৃক্ষনাথ"। উনি লুপ্তপ্রায় পাখীর প্রজাতি ও বৃক্ষের সংরক্ষণ করে চলেছেন প্রতিনিয়তঃ । আর ভালোপাহাড়ের আশেপাশের অনেক মানুষেরা স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসছেন ভালোপাহাড়ের মঙ্গলের জন্য। তাঁদের মা-বাবা বিয়োগ হলে তাঁরা শ্রাদ্ধশান্তি, শান্তি স্বস্ত্যয়ন , ও আত্মীয় বন্ধু পরিজনকে মোচ্ছব করে না খাইয়ে সেই অর্থ দিয়ে ভালোপাহাড়ের আদিবাসী শিশুদের পেট ভরে খাওয়ান। সেখানেই নাকি তাঁদের মা-বাবার পরলোকগত আত্মার সবচেয়ে শান্তি হয়। আজকের দিনে এমন মানুষেরা সত্যি আছেন? কমলদা আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখলেন। সেই থেকে ভেবেই চলেছি অহোরাত্র। পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত পাহাড়ী এলাকার শিশুরা পাহাড়ের পাকদন্ডী পথ ধরে হেঁটে স্কুলে আসতে পারতনা বলে দুটি বাসের ব্যবস্থা করেছেন স্টেট ব্যাঙ্ক। আর কি চাই আমাদের! কোথায় ভোটের কাজিয়া? কোথায় স্বার্থ সংঘাত? কোথায় আত্মতুষ্টি? মাটি আর মানুষকে আঁকড়ে আছেন আমাদের সকলের প্রণম্য কমলদা!