কে কি বলছেন?

যুগসাগ্নিক পত্রিকার সম্পাদক শ্রী প্রদীপ গুপ্ত লিখেছেন 

অথ "গল্পবৈঠক" কথা --

আমার কিন্তু এই অসুখটা একেবারেই ছিল না। তোমরা বিশ্বাস করো, এই যে পেটে কথা চেপে না রাখতে পারার অসুখটা, মানে আরকি যতক্ষণ পর্যন্ত মনে আসা কথাটা তোমাদেরকে বলতে না পারছি ততক্ষণ এই যে পেট গুড়গুড় করা --- আচ্ছা, এ অসুখের নিদান জানো কেউ? মা বলতেন কথা চেপে না রাখতে পারলে জলের কাছে গিয়ে বলবি, দেখবি সব অস্বস্তি ---,
কিন্তু এটা কি জল? তবে এটা ঠিক যে ফেসবুক জল না হলেও বেশ জলবৎ তরলং। মানে যেহেতু তোমাদেরকে মুখোমুখি দেখতে পাচ্ছিনা, কাজেই তোমরা হাসছো, নাকি মুখ ভেংচাচ্ছো কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা। আর পাচ্ছিনা যখন, তখন তো ---

বিষয়টা হোল সামনের একুশের জান নিকোনো খাটা খাটুনির ভেতর ভেবেছিলাম এইসব মিটে টিটে গেলে তখন বেশ পা লেছে বসে সেদিনের গল্পটা বলবো। সেদিনের গল্পটা মানে সেদিনের গল্পবৈঠকের গল্প। মানে শ্রদ্ধেয়া ইন্দিরা দির মানে গল্পকার ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের ডাকে ---
এই দেখো সেই তো বলেই দিলাম হে। আসলে ওই যে পেট গুড়গুড় --- নাহ ডাক্তার একটা দেখাতেই হবে বুঝেছো!  তা যাক গে যাক আর রাখঢাক না করে বলেই ফেলি।

গিয়ে তো হাজির হলাম জানো? কোথায় গেলাম? হু হু বাবা, সে এক স্বপ্নের পুরী। ত্রিধারা সম্মিলনীর পুজোটা যেখানে হয়, ঠিক তার পেছনে একটা ঠেক। মনোহরপুকুর লেনের গান কাফেতে,মাদুর বিছানো পথ ধরে উঠে গেলাম দোতলায়। সে এক সুন্দর খোলামেলা অথচ খোলামেলা না, আলোর আধিক্য নেই বলে অন্ধকারও বলা যাবেনা। সুন্দর লম্বা টেবিলের চারধারে সুদৃশ্য কেদারা। মাথার ওপর হ্যারিকেনের আদলের বিজলি বাতি। দেখলেই মন এক সুন্দর মোহাচ্ছন্নতার আবেশে ভরে যায়। এক এক করে গল্পকারেরা আসছেন। অনেকেই পূর্বপরিচিত, অনেকের সাথে সেদিনই --,
এই দেখো সেদিন মানে কি? কোনদিন সেটাই তো বলা হয় নি এখনো। গেল রবিবার আঠারোই ফেব্রুয়ারি বিকেল তিনটায় ইন্দিরাদির ডাকে একে একে সবাই আসছেন। অনেকেই পূর্বপরিচিত অনেকেই অচেনা, ধীরেধীরে পরিচিত হচ্ছি, অপরিচিতের আড় ভাঙছি, এমন সময় শুরু হোল সেদিনের " গল্প বৈঠক "।
আপনাদের আর একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। আমার ভুমিকা কিন্তু গল্পপাঠের নয়, আলোচকের। চিন্তা করে থই পাচ্ছিনা। গল্প লিখি এ কথা সত্যি। লিখি মানে যে বিরাট কিছু লিখি, একদমই সেটা নয়। মনের আনন্দে লিখি। কিন্তু তাই বলে গল্প শুনে প্রতিক্রিয়া জানানো। যে কিনা ক্রিয়াই জানেনা সে জানাবে প্রতিক্রিয়া! " হরি হে দীনবন্ধু "বলে নেমে গেলাম ডুব জলে।
এরপর যা ঘটতে থাকলো সে কথা আজও ভাবছি। চোখের সামনে দিয়ে থুড়ি মনশ্চক্ষের সামনে দিয়ে একটা একটা করে চলচ্চিত্র চলে যাচ্ছে। আর আমি মুখে বাক্য ফোটালেও অন্তরে বাক্যহারা হয়ে যাচ্ছি। কিসব গল্প এক একেকটা। মনে হচ্ছে যেন --- নাহে, সে বলা যাবেনা। বলবই বা কেন? যা বলার তো সেখানেই বলেছি। কিন্তু জীবনে এই প্রথমবার উপলব্ধি করলাম যে গল্প শুনে পাঠ প্রতিক্রিয়া দেওয়া একদমই উচিৎ না। অন্তত আমার মতো মহামূর্খের তো একেবারেই না। গল্পটা নিয়ে মন জাবর কাটা শুরুই করতে পারলো কই? অথচ যে গল্পগুলো শুনলাম সেদিন, সেগুলোর এক একেকটা গল্পের সাথে পুরো এক একটা দিন যাপন করা কোন ব্যাপারই না। আমি কারো নাম করছি না একেবারেই, কেন করবো? কে কম ছিলেন সেদিন?
ইন্দিরা দি, আপনার এই উদ্যোগে বাংলা ছোট গল্পের খরা কাটছে এটা আমি স্পষ্ট অনুভব করছি। আপনাকে ধন্যবাদ জানাবো না। এ জন্যই জানাবো না কারণ আমি চাই আপনার উদ্যোগের সফলতা। বরং আমি কৃতজ্ঞতা জানাবো সেদিনকার বৈঠকে আমার মতো একজন অক্ষরশ্রমিককে আলিবাবার রত্নখনিতে প্রবেশ করার আমন্ত্রণ জানানোর জন্য।
ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। কারণ আপনার যে সুস্থ থাকার দরকার। তবে বড় লোভ ধরিয়ে দিলেন কিন্তু ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন