বুধবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৮

গল্প বৈঠক ২৪, রূপশালীর ১০ বছর পূর্তিতে

রূপা মজুমদার ও চুমকি চট্টোপাধ্যায়


আমন্ত্রণপত্র ডিজাইন করলেনঃ নন্দিনী সেনগুপ্ত
শিশুদিবসের প্রাক্কালে রূপশালীর ১০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান হল দক্ষিণ কলকাতার শরত বাসভবনে। সেই উপলক্ষে আমন্ত্রিত ছিল গল্পবৈঠকতাঁদের ২৮ তম গল্পপাঠ নিয়ে। বেশ কিছু গল্প ছড়া আর এক সুন্দর আলোচনা চক্র নিয়ে সুচারু অনুষ্ঠানটি হয়ে গেল ১২ই নভেম্বর, ২০১৮য়।
ছিলেন রিনা গিরি রূপশালীর তরফ থেকে আর ছিলেন সাহিত্যিক ইন্দিরা মুখোপধ্যায় যার অসীম উৎসাহ ও উদ্দীপনা দিয়ে গড়ে তোলা গল্পবৈঠক আজ শুধু এক গল্পের আড্ডাই নয়, বরং গল্প অনুশীলনের এক সুন্দর সাবলীল চারণভূমি।
অনুষ্ঠান শুরু হয়েছিল নির্ধারিত সময়েই মরদান হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী  অনুষ্কা দাশগুপ্তর গান দিয়ে। অনুষ্কা প্রথমে আমাদের শোনাল অন্তরা চৌধুরীর বিখ্যাত গান "নাচো তো দেখি আমার পুতুল সোনা" এবং তারপর অত্যন্ত সাবলীল গলায় শোনাল "লাল নীল সবুজেরই মেলা বসেছে"। কিশোরী অনুষ্কার গানে মুগ্ধ যখন শ্রোতারা তখন সঞ্চালিকা জয়া চৌধুরী মঞ্চে ডেকে নিলেন কিশোরভারতীর সম্পাদক চুমকি চট্টোপধ্যায় ও শুকতারা এবং নবকল্লোলের সম্পাদক রূপা মজুমদারকে। বিশিষ্ট দুই অতিথি বক্তব্য রাখলেন অতি প্রাসঙ্গিক এক বিষয়ের ওপর -  "ডিজিটাল যুগে কিশোররা কি সাহিত্য পড়ছে?"

রূপা আমাদের শোনালেন আশার কথা। বললেন কিশোর সাহিত্যের ভবিষ্যৎ মেঘলা নয়। এখনও বহু কিশোর মোবাইল ফোন বা টিভির হাতছানি উপেক্ষা করেও বই পড়ে আর সেই কারণেই এখনও পর্যন্ত যথেষ্ট কিশোর সাহিত্য সৃষ্টি হয়েই চলেছে।
চুমকি বললেন কিশোর সাহিত্যের ফর্ম পাল্টেছে হয়ত অল্প তবে কিশোর সাহিত্যের সংজ্ঞা পালটে যায়নি আজো। এও বললেন শহরের তুলনায়  মফস্বলে কিশোর সাহিত্যের পাঠক এখন অনেক বেশি। তার কারণ হিসেবে পাঠমাধ্যম থেকে শুরু করে গ্যাজেট নির্ভরতা এবং অতিরিক্ত ভিস্যুয়ালের ব্যবহারে শিশু মস্তিস্কের অলস হয়ে ওঠা সবই উঠে এসেছিল। তবে দুই সম্পাদক এবং দর্শকাসনের বন্ধুরা অনেকেই একমত ছিলেন যে ভাল পাঠক তৈরি সম্ভব তখনই যখন বাড়িতে ভাল পড়ার পরিবেশ এবং আগের প্রজন্মের ভালো পড়ার অভ্যাসের ছায়া পড়বে আগামীর মননে।
শ্রোতা সঞ্চালক ও অতিথিরা সবাই একাত্ম হয়ে এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করায় সময় বয়ে গেল বড় তাড়াতাড়ি।
 
গল্প পাঠেঃ সুকন্যা সাহা, সঙ্গীতা দাশগুপ্ত রায়, বুবুন চট্টোপাধ্যায়, পায়েল সেনগুপ্ত, দেবযানী বসু কুমার, মিতা নাগ ভট্টাচার্য, স্বপ্না বন্দ্যোপাধ্যায়, নন্দিনী সেনগুপ্ত এবং ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়

শুরু হল ছড়া ও গল্পপাঠের পালা। প্রথমে কবিতা শোনালেন সংস্কৃতি ব্যানার্জী। সুখপাঠ্য কবিতাটি আজকের দিনে বড় প্রাসঙ্গিক লাগে।অনুষ্ঠানের শুরুতে রিনা গিরির উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের উত্তরীয় গামছা দিয়ে বরণ করে নেওয়াটা নজর কেড়ে নেয়।
এর পর সঙ্গীতা দাশগুপ্তরায় শোনালেন একটি ছোট ছেলের বোধবিভ্রাটের গল্প।  ছোট বেলায় বড়দের সব কথার মানে খুব স্পষ্ট থাকে না। তেমনই এক কথা থেকে এক ছোট ছেলের বোঝার ভুল আর সে ভুল ভাঙ্গার এ গল্প আমাদের অনেকের ছোটবেলাকেই মনে করাবে সম্ভবতঃ। 
দেবযানী বসুকুমার শোনালেন "পাড়াবেলা"র কথা যে বেলা আমাদের সকলের ছেলেবেলার সাথে জড়িত কিন্তু দুর্ভাগ্য যে এখনকার শিশুরা এ স্বাদে বঞ্চিত থেকে যাচ্ছে প্রতিটি পরিবারেই। দেবযানীর আন্তরিক আর্তিটি যদি শিশুদের পাড়াবেলা ফিরিয়ে দিতে পারত তো  বেশ হত।
মিতা নাগ ভট্টাচার্য্য শোনালেন এক শিশুর গল্প যে আচমকাই এক চরম যন্ত্রণাময় সত্যর মুখোমুখি দাঁড়ায়। বাবার মৃত্যুসংবাদের যন্ত্রণা নিয়ে দুর্গার কাছে প্রার্থনারত শিশুটির কথা শুনতে শুনতে মন কেঁদে ওঠে। মিতা কিন্তু দক্ষতার সঙ্গে স্বরচিত গল্পটি স্মৃতি থেকে বলে চললেন। 
স্বপ্না বন্দোপধ্যায় শোনালেন গল্পের ছায়ায় অনেক অজানা তথ্য দেশ বিদেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসকে কেন্দ্র করে। গল্পের শুরুতে একটা চমকপ্রদ রেসিপি কিশোর কিশোরীদের অভিভাবকদের জন্য বেশ মিষ্টি চমক।
নন্দিনী সেনগুপ্তর লেখায় ফুটে উঠল  কিশোর মনের  মাধুর্য্য। স্কুল প্রজেক্টে ভাল নম্বর পাওয়ার আকাঙ্খা , প্রত্যাশা না পূরণ হওয়ার দুঃখ এবং সব শেষে আচমকাই কিশোর মনটির মধ্যে সাফল্যের খুশি ফিরে আসার এই গল্পও শ্রোতাদের শিকড় ছুঁয়ে যায়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "ভুলুরাম শর্মা"  ছড়াটি  শোনালেন কৃষ্ণা মজুমদার। ছড়াটি নিজগুণেই বড় মিঠে তায় তায় কৃষ্ণার পরিবেশনার গুণে  একবার শুনলে ভোলা অসম্ভব।
এর পর ছিল  সুকন্যা সাহার লেখা এক কিশোরের গল্প যে স্বপ্নে বেড়িয়ে আসে ২০৪০ সালের কিছু মুহূর্ত ছুঁয়ে। গল্পটি শুনতে শুনতে মনে হয় সত্যিই হয়ত ২০৪০ সালের কিশোর কিশোরীরা বড় একলা হয়ে যাবে। সত্যিই হয়ত মানুষের সব চেয়ে বড় বন্ধু সহায়ক এবং সঙ্গী হবে শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। যদি তাই হয় তো সে  আগামী বড় একাকীত্বের আগামী।
বুবুন চট্টোপধ্যায় শোনালেন  এক  কিশোরীর গল্প  যে তার জন্মদিনে পেয়েছে আস্ত একখানা ঘর সুন্দর করে সাজানো  আর তার পরদিনই  পেয়েছে এক বিশ্রী অভিজ্ঞতা যা হয়ত এক ঝটকায় কেড়ে নিল তার কৈশোর।
শিবানী পান্ডে মুগ্ধ করলেন দীপ মুখোপধ্যায়ের লেখা "কেয়ার অফ ফুটপাথ" ছড়াটি আবৃত্তি করে । এ  ছড়া সেই সব কিশোরদের নিয়ে যারা আমাদের শিশুপাঠ্য  বইয়ের বাইরে এবং যাদের শৈশব এবং কৈশোর হারিয়ে গিয়েছে সমাজের  যন্ত্রণার ফুটপাথে।
পায়েল সেনগুপ্ত শোনালেন দিয়েগো নামের ভারি মিষ্টি এক ছেলের গল্প যার পরিত্রাণ নেই বাবা কাকা মামাদের উচ্চাকাঙ্খার স্বপ্ন থেকে।
সবশেষে ইন্দিরা মুখোপধ্যায় অপূর্ব দক্ষতায় রূপকথায় মিশিয়ে দিলেন সৌরবিজ্ঞান। কিশোর কিশোরীরা এ গল্পটি একবার শুনলে সৌর বলয়ে গ্রহের অবস্থান এবং তাদের বাহ্যিক কিছু বিবরণ এবং পৃথিবী ছাড়া বাকী গ্রহদের মধ্যে বৃষ্টির হাহাকার আর কখনও ভুলতে পারবে না।
অনুষ্ঠানের প্রায় শেষ ভাগে এসে রিনা গিরি শোনালেন স্বরচিত ছড়া।
শেষ পাতে ছিল পৃথা বলের গাওয়া রূপকথার মিশেলে ছড়ার গান। অপূর্ব এ উপস্থাপনা কিছুক্ষনের জন্য শ্রোতাদের ছেলেবেলায় ফিরিয়ে নিয়ে যায়।
আর এই সবের মাঝে ছিল জয়া চৌধুরীর টকঝালমিষ্টি মন্তব্য এবং কখনও সুচিন্তিত মতামতও।  অনুষ্ঠানের রাশ টানা ও ছাড়ার যে অনুপম দক্ষতা জয়া দেখিয়েছেন তা প্রশংসার দাবী রাখে নিশ্চিতভাবে। 



গান গল্প ও ছড়ার ঠাসবুনোটের এই গালিচায় বসে দুদন্ড জিরিয়ে নেওয়ার অবসরটি সাজিয়ে দেওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ গল্পবৈঠকের সমস্ত লেখক পাঠক ও অতিথিদের। আর ছিল চা সিঙ্গারার আয়োজন। 

প্রতিবেদন লিখলেনঃ সঙ্গীতা দাশগুপ্ত রায়  

যুগশঙ্খ রবিবারের বৈঠক 

বুধবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

গল্পবৈঠক ২৩, সেপ্টেম্বর সোনাটা



বালিগঞ্জের নন্দী স্ট্রীটের ক্যাফে স্ট্রিংসে হয়ে গেল গল্পবৈঠকের ২৩ তম পর্ব। গত ১৬ই সেপ্টেম্বরের অনুষ্ঠানের নাম ছিল সেপ্টেম্বর সোনাটা। কিন্তু থাকিয়া গেল রেশ। শেষ  হইয়াও হইল না শেষ। গল্পবৈঠকের অভিধানে 'শেষ' শব্দটি অবান্তর তার আভাস পাওয়া গেল প্রধান উদ্যোক্তা ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের ২৪তম গল্প বৈঠকের সানন্দ আগাম ঘোষণায়। সেপ্টেম্বরের ছুটির বিকেলে
ক্যাফের আনাচকানাচ ভরপুর ছিল সেদিনের নিমগ্ন শ্রোতায় ।
 

সেদিন সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটির ভাবনায়,পরিকল্পনায় এবং সঞ্চালনায় ছিলেন কবি, বাচিক শিল্পী মৌমিতা ঘোষ। শারদ অর্ঘ্য দিয়ে সূচনা হল গল্প বৈঠকের।নবীন প্রবীণ কবিদের শরতের কবিতার ফাঁকে ফাঁকে আগমনী গান গাইলেন তপশ্রী পাল। কিবোর্ড অনুষঙ্গে ছিলেন নীলাদ্রি। বাজল তোমার আলোর বেণু ঝংকৃত হল সঞ্চালিকার প্রাসঙ্গিক কবিতা-ছড়ার কোমল সংযোজনায়। শব্দ-যোজনায় তপোদা।
এবার গল্পপাঠের শুরু। ওইদিন থিম অণুগল্পের বিষয় ছিল দুটি, ঝগড়া অথবা হাসি। ৩০০ শব্দের মধ্যে প্রত্যেকে হাসি অথবা ঝগড়া বিষয়ে গল্প লিখে এনেছিলেন। মূল পর্বে লটারিতে প্রথমেই এলেন সাঁইথিয়ার সুজাতা রায়। অত্যন্ত সাবলীলতায় দোলপূর্ণিমা নিশি'   গল্প আমাদের নিয়ে গেল লক্ষ্মীর পাঁচালীর অন্তর্নিহিত কুপ্রথা-বিরোধিতার আঙিনায়। বেশ সুচারু ভঙ্গিতে পাঁচালীকারের দাঁড়িতে টান মেরেছে সুজাতা। কস্তুরী চট্টোপাধ্যায়ের মজার 'নাইটি কাহিনী'র ফোঁটা ফোঁটা জলে ভিজল গল্প বৈঠকের বারান্দা। 


বুবুন চট্টোপাধ্যায়ের গল্পে আবারো দেখি 'গরু'র দুধে চোনা ফেলে সগর্বে বেরিয়ে গেল ছোট্ট শালিখ। সাদামাটা ঘরোয়া কাহিনী অনবদ্য হয়ে উঠল তাঁর লেখায়। 
স্বপ্না বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'জেরাতে মোর' গল্পটিতে বিবদমান এক স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সেতু হল দুঃসময়। সোনালীর গল্প 'আধুনিক ভজনের কেচ্ছা' বেশ উপভোগ্য। কেচ্ছাকাহিনীতে কুতূহলী নই কোন বাঙালিবাচ্চা বুক ঠুকে বলবে বাপু? ঘুমন্ত ভজন-বাবুরা জেগে উঠলে ক্যামেরা চলুক বুঝেশুনে। ভাস্বতী বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'থিম বিভ্রাট' কিন্তু আমাদের চেতনাকে কিঞ্চিৎ ঝাঁকিয়ে  দেয়। এ যেন তোমার পূজার ছলে তোমায় ভুলেই থাকি। থিম-ভরপুর পুজোমণ্ডপে কখনও যদি একচালার ঠাকুর ফিরে আসে তবে জেনারেশন এক্স তা গ্রহণ করবে তো? বিরাট প্রশ্নচিহ্ন। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'জামবাটি' ও কখনও সখনও প্রান্তিক চাষী দম্পতির আপাত বচসার অন্তরালে নিরুচ্চার প্রেমের ইঙ্গিতবাহী হতে পারে বোঝা গেল। বেশ সুন্দর তাঁর গল্পের বয়ান।
'কালচার' গল্পটিতে রায়গঞ্জের শর্মিষ্ঠা ঘোষ দেখালেন মিঃ কমলাকান্ত বিশ্বাস একাধারে সংস্কৃতি-অপ-সংস্কৃতির মিশেলে একটি বর্ণময় চরিত্র বিশেষ। এরকম চরিত্র খোঁজ করলে দু'একটি মিলেও যায় আমাদের আশে-পাশে। কৃষ্ণা দাসের 'ঠেলার মাল'এ অফিসটাইমের বাদুড় ঝোলা বাসের নৈমিত্তিক একঘেয়েমি থেকে যাত্রীরা খানিক রৌদ্ররসের আভাস নিয়ে গন্তব্যে যায়। উপরি পাওনা।
জয়তী অধিকারীর 'পোষ্য' যখন দু'কেজির ইলিশ দিয়ে ভুরিভোজ সারে তখন মনিবনীর সাথে আমরাও খেপে উঠি। এ কী কাণ্ড! ইলিশ কি সস্তা?
অংশুপ্রতিম দে-র 'যুযুধান' এ আশার কথা শেষমেষ দু'পক্ষের আপোসমিলন। ঝগড়ার মধ্যেও হাসির আভাস। যদিও সাদামাটা গল্পের বিষয়টি তবুও স্বল্প পরিসরে মন কাড়ে।
নন্দিনী সেনগুপ্তর গল্প 'রুপুদের সংসার'-এ পাঠক এতটাই মুগ্ধ যে মনে হয় ওই সংসারের একজন সদস্য হতে পারলে অন্তত রুপুর মায়ের হাতের অরোরা খাওয়া যেত,বাবার ডার্লিং-এর গায়ে পড়ে নানান মস্করা করা যেত।
রজত শুভ্র ব্যানার্জির 'রাধাগোবিন্দবাবুর অভ্যাস' গল্পগুজব শেষে বাড়ি ফিরে দুটি চমচম খাওয়া। আমরা জানিনা কোনো বিশেষ মহিলার হস্তনির্মিত স্মৃতিবিজড়িত কিনা সেই চমচম। তবে তাঁর গল্পে এই অভ্যেস কথাটি যেন বড্ড চেনা মনে হল। যেন অগ্রবর্তিনী কোনও লেখিকার ছায়া দেখতে পাওয়া গেল।
'নৃপতিবাবুর নবীন জীবন'-এ তো নিবেদিতা ঘোষ মার্জিত বিপত্নীক নৃপতিবাবুকে বেঘোরে স্প্যানিশ দৌড়বীর পুত্রবধূর দৌড়োনোর পোষাক পরিধান করাইয়াই ছাড়িয়াছে । তাহাকে যে দৌড় করায় নাই ইহাতেই পাঠককুলের স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়িয়াছে। টয়লেট পেপারের বাংলা প্রতিশব্দ 'হাগজ' লেখিকার অন্যতম স্বকীয়তার পরিচয় দেয় যা ব্যবহারে তাঁর কলমের দৌরাত্মে তিনি কুণ্ঠিত হন নাই ।
জয়া চৌধুরির 'শিশুপাঠ' এ শিশুর কাছে এখনও অনেক পাঠ নেবার আছে। বুনো ওল আর বাঘা তেঁতুলের চাপান উতোর তা দেখাল। তবে গল্পের বুনটে আরেকটু মুনশিয়ানা দেখাতেই পারতেন তিনি।
কৃষ্ণা রায়ের 'গিলোটোলজিস্ট' গল্পে এক জবরদস্ত হাসির খোরাকের রসদ মজুত। একশ'দশ কেজি ওজনের পচাঁত্তর বছর বয়সী মহিলার উপস্থিতিই হাঁ হয়ে যাওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। শ্যামলী আচার্যর গল্প 'কাঠি' রাজনীতির কলকাঠির ভাঁটায় সাক্ষাৎ জিয়নকাঠি।পরিশীলিত উপস্থাপনা।
বাংলার অধ্যাপক ঊর্মি দাসের 'লোহিত আকাশ পথে' মর্তের হিরোইন ফ্যাশন ডিজাইনার হিরো ভিলেন প্রভৃতিতে মজেছে স্বর্গের তথাকথিত দেবদেবীরা। স্বর্গের অপ্সরাতে তাদের এখন অরুচি। তবে গল্পটি নির্দিষ্ট শব্দ সীমা অতিক্রম করেছিল তা বলাই বাহুল্য। তমালী রায়ের 'ভুলো'র নায়ক এমনিতে ভালো মানুষ কিন্তু ভুলো। সায়া নামক মেয়েদের অন্তর্বাসে ছেলেদের পাজামা ভ্রম বা চানাচূরের সাথে দহি কম্বিনেশন বেশ অরুচিকর শোনায়। আর তাঁর এহেন শব্দচয়ন গল্পটিতে কোথাও যেন একটু তাল কেটে দেয়।
দীপা চ্যাটার্জি গল্প লেখেন না কিন্তু তাঁর মামীর খোঁপা মামায় বাঁধে সত্যি যেন গল্প ঘটে ছিল একটা পুরুলিয়ার ঘাটে। বেশ। এমন মামা সত্যিই দুর্লভ ।


ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের 'হামি' সাম্প্রতিক সময়োপচিত বিষয় নিয়ে। যা এক নিষ্কলুষ 'হামি' স্মরণ করায়। মধ্যবয়সী নন্দবাবু প্রেম-পিরিতি সন্দর্শনে বেজায় ক্ষুব্ধ। তার স্ত্রী যুগপন্থী। দুটি পায়রার চঞ্চুমিলন রুখতে যে বন্দুক তাক করতে পারে তাকে স্মরণ করাতে হয় তার নিজের যৌবনকালের অনেক মজা-মস্করার স্মৃতিকথা। পক্ষিপ্রেমের সরলতা তাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বোঝাতে হয়। প্রকৃত প্রেম নিকষিত হেমস্বরূপ।
গল্প পাঠের শেষপাতে
টপ করে পড়ল তপশ্রী পালের 'নাড়ুর নাক'। পর্যাপ্ত হাস্যরস থাকলেও সকলের হজম হয় নি। কারও কারও অতৃপ্তির ঢেঁকুর উঠেছে গল্প শুনতে শুনতে। কারণ নাক থেকে নিঃসারিত বর্জ্য পদার্থের উপস্থিতি এবং তার সঙ্গে আমাদের সবার অতি প্রিয় নকুলদানার তুলনা।  
ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় দুটি রামপ্রসাদী গানের আবেশে মুগ্ধ করলেন সভা। শ্রাবণী ব্যানার্জি শোনালেন দুটি অনবদ্য রবীন্দ্র সঙ্গীত।
আর অনুষ্ঠান কানায় কানায় পূর্ণ হল মৌমিতাও জয়জিতের মজার অনু শ্রুতিনাটকে। আগাগোড়াই অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় যথেষ্ট মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন মৌমিতা ঘোষ।
আমাদের সকলের প্রিয় লেখিকা কণা বসু মিশ্রর মুখনিঃসৃত কিছু জরুরী কথায় আমরা সমৃদ্ধ হলাম। আশাতীত এবং অতিরিক্ত প্রাপ্তি ছিল সেদিন সিনথেসাইজার বাদক নীলাদ্রির কণ্ঠে আধুনিক বাংলা গান। যে গান সবাইকে চেয়ারচ্যুত করে প্রায় নৃত্যোন্মুখ করে ছেড়েছিল সব শেষে।
ক্যাফের এক কাপ করে চা আর শ্রদ্ধেয়া অগ্রজ সাহিত্যিক কণাদির আনা একটি পরমরোচক মিষ্টি দিয়ে ২৩ তম গল্প বৈঠকের সুখসমাপ্তি হল।




প্রতিবেদনটি লিখেছেন স্বপ্না বন্দ্যোপাধ্যায়
ফোটো সৌজন্যে, জয়তী ভট্টাচার্য অধিকারী                        
অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পত্র ডিজাইনে নন্দিনী সেনগুপ্ত 
  

মঙ্গলবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৮

গল্পবৈঠক - ২২, একটি প্রতিবেদন

ছবিঃ নন্দিনী সেনগুপ্ত
৮শে শ্রাবণ, ১৪২৫ এর এক বর্ষা বিকেলে এবারের ‘গল্প বৈঠকের’২২ তম আসরটি বসেছিল লেখক কণা বসু মিশ্রের বাড়িতে। মনের তাগিদে সংসারের সব কাজ অকাজ সামলে মেয়েরা অনবরতঃ যে লিখে চলে বা গল্পের বুনোটে নিজের গোপন অনুভুতিটুকুর জন্ম দেয় তারই রেশ পাওয়া গেলো এবারের বৈঠকেও। এবারের বৈঠক শুরু হলো আমন্ত্রিত গল্পকার উর্মি দাসের ‘চাবি’ গল্পটি দিয়ে। সাইবার ক্যাফেতে ধুলোর পরত জমে থাকা একটি কমপিউটারের আত্মজীবনী। ঝরঝরে গদ্যে,বিষয়বস্তুর নতুনত্বে গল্পটি একটা অন্য জায়গায় পৌঁছে দেয় যেন। দ্বিতীয় গল্প সোনালী মুখোপাধ্যায়ের ‘মায়াবনবিহারিনী’। মা মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে বলা এই গল্প অসম্ভব সুন্দর একটা মোড়ে দাঁড় করিয়ে দেয় আমাদের। মেয়ের সঙ্গে তার প্রেমিকের আড়ালে থাকা মায়ের কথপোকথন গল্পটিকে একটা অন্য উত্তরণে নিয়ে যায়। পরের গল্প জয়া চৌধুরীর 'লোকটা’।একজন বৃদ্ধ মানুষ ও তার দুই পুত্রের জীবনবোধের কাহিনী জয়ার লেখায় সুন্দর ফুটে উঠেছে।পরের গল্প কৃষ্ণা দাসের ‘আবর্ত’। রোজ পার্কে দেখা হওয়া দুজন প্রবীন প্রবীণার আটপৌরে একাত্বীত্বের কাহিনী তার গল্পে চমৎকার বলেছেন কৃষ্ণা। বড়ো মন ছোঁয়া গল্প। পরের গল্পটি আইভি চট্টোপাধ্যায়ের ‘ব্যাঙ্ক’।ব্যাঙ্কের একজন চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীর জীবন যুদ্ধের কাহিনী, যে অবসর সময়ে মেয়ে সেজে যাত্রাপালা করে।পরবর্তীতে জীবনে উচ্চ প্রতিষ্ঠিত পুত্রদের লজ্জা হয়ে দাঁড়ায় বাবার এই বিটিছ্যেলা সেজে অভিনয় করা।করুণরসে সিক্ত এই গল্প শেষে গিয়ে যেন অন্য মাত্রা পায়। নন্দিনী সেনগুপ্তের স্বপ্ন গল্পে  অণুলেখার সঙ্গে কে চ‍্যাট করছিল? তার স্বামী সুবীর, নাকি অন‍্য কেউ? অণুলেখার এক মানসিক দোলাচলে শেষ হয় গল্পটি।বাস্তবের উপর ভিত্তি করে লেখা গল্পটি খুব মন কাড়া। এরপর কস্তুরী চট্টোপাধ্যায়ের ‘বাজি’। সারাদিন ফেসবুক চ্যাটের মাধ্যমে দুই অসম বয়সীর প্রেম কৌতুক দিয়ে শুরু হয়। সাতান্নর জয়দীপ দুরুদুরু বক্ষে একদিন দেখা করতে যায় একুশের রিয়ার সঙ্গে। ভুল ভাঙ্গে অপত্যস্নেহে যখন দেখে রিয়া তাঁরই ভাবী পুত্রবধু।কিছুটা কৌতুকের ঢং এ লেখা গল্পটি কিছুটা চেনা কিছুটা অচেনা একটা মিষ্টি ছাপ রেখে যায়।পরের গল্প দীপা চ্যাটার্জির ‘আলতা বুড়ি’। বিধবা হিরন্ময়ী সধবা সেজে বাড়ি বাড়ি আলতা পড়িয়ে চারটি পেট চালায়। শেষ ট্রেনে আবার বিধবার বেশ  পরে ঘরে ফেরে রোজ।দৈনন্দিন জীবনের এই করুণ কাহিনীর রেশ গল্প শেষ হওয়ার পরেও যেন প্রাণ ছুঁয়ে রয়ে যায় আমাদের পাঁজরে। এরপর ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের ‘সঙ্গীত নন্দন’ গল্পটিও কিছুটা অসম বয়সীর ভারচ্যুয়াল প্রেমের উপর দাঁড়িয়ে।স্বামী সন্তান ছেড়ে আসা বিবাহবিচ্ছিন্না একজন মধ্যবয়সী একা মায়ের বয়সে অনেক ছোট অনীশের সঙ্গে অদ্ভুত এক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।এই সম্পর্কের যোগসূত্র ছিল গান।ভুল ভাঙ্গে যখন সেই মা দেখে অনীশের গায়িকা প্রেমিকা আর কেউ নয় তারই মেয়ে।বড়ো সুন্দর একটি গল্প বুনেছেন ইন্দিরা। বৈঠকের শেষ গল্পটি পড়লেন বুবুন চট্টোপাধ্যায়।’দিদিয়া’ নামের দুই বোনের এই গল্পের বিষয়ে নতুনত্ব আছে। বড়ো দিদির প্রেমকে হালকা ভাবে নেওয়া ছোট বোনের অনুভুতি ধাক্কা খায় যখন দেখে তার দিদিয়া পোলিও আক্রান্ত প্রেমিককে প্রগাঢ় ভলোবাসায় জড়িয়ে রেখেছে। ঝরঝরে গদ্যে সুন্দর গল্প লিখেছেন বুবুন। এবারের বেশীর ভাগ গল্প ছিল ভারচ্যুয়াল প্রেম কেন্দ্রিক। প্রতিটি গল্প মন শুনে গল্পগুলি নিয়ে সুঠাম আলোচনা, সুন্দর সুচিন্তিত মতামত দিয়েছেন এদিনে অতিথি বাংলা সাহিত্যে কৃতি ছাত্রী কবি প্রমিতা ভৌমিক ও লেখক বুবুন চট্টোপাধ্যায়। তাদের অকুন্ঠ ধন্যবাদ অবশ্য প্রাপ্য।
এদিনের গল্পবৈঠকের উপরি পাওনা ছিল তপশ্রী পালের গান। অনবদ্য একটি বর্ষার নজরুল গীতি গাইল সে। আর গাইল একটি ভজন। আর শেষ পাতে ছিল কণাদির তুমুল আতিথেয়তায় জমজমাট খাওয়া দাওয়া।

ছবিঃ নন্দিনী সেনগুপ্ত

অনুষ্ঠানের রিভিউ লিখেছেন 
কস্তুরী চট্টোপাধ্যায়

বুধবার, ২৫ জুলাই, ২০১৮

কিশোরদের জন্য আয়োজিত গল্পবৈঠক ২১ @ দেবভাষা, গোলপার্ক


লকাতার গলিপথ জুড়ে তখন বিকেলের খেলা। তারই এক পাশে শুরু হল ‘গল্প বৈঠক’এর ২১ তম বৈঠক। সেদিন ছিল কিশোরদের জন্য স্বরচিত গল্পপাঠের আসর।
সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন শ্রীমতী সোনালী ভট্টাচার্য। সঞ্চালনার ফাঁকে ফাঁকে ছোটদের জন্য পদ্য, ছড়া অন্য মাত্রা যোগ করেছিল।
অতিথি গল্পকার শ্যামলী আচার্য পড়লেন "মেসি" নামে গল্প। স্বপ্নের ফুটবল মাঠে শরণ্যার মেসিকে পাওয়ার গল্প বলেন। বিশ্বকাপ চলাকালীন এই গল্প রীতিমত রিলেট করলেন উপস্থিত সকলে। স্বপ্না বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পের নাম, "মিঃ টুসন এবং স্যার বিশালাক্ষী দন্ডপাট" । ছোটখাট লুজ বল থাকলেও কিশোর গল্প হিসেবে সার্থক।  ভাস্বতী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘অংক স্যারের ভাই’ গল্পটি ছোট্ট টুবলু-র প্রচণ্ড রাগী আর গম্ভীর অংক স্যার ও টুবলুর প্রণোদনায় তাঁরই লুক-অ্যালাইক এক পাগলের প্রতি তাঁর হৃদয় মুচড়ে ওঠার কাহিনী। ‘সেই চোখ’ ছিল তপশ্রী পালের ছোট্ট টানটান কিশোর থ্রিলার। নিবেদিতা ঘোষ মার্জিত ‘মুগার উপাখ্যান’-এ শুনিয়েছেন এমন এক কাহিনী, যেখানে সকলকে টপকে অকস্মাৎ এক বিরাট অজগরকে পরাস্ত করার সুযোগ পেয়েও কীভাবে সেই লোভ সংবরণ করে মুগা বীরের মতো তাকে হেলায় ছেড়ে দিচ্ছে আগামী সম্মুখ সমরের প্রত্যাশায়। কৃষ্ণা দাসের ‘মায়ের দয়া’ ছোঁয়াচে পক্স আর তার সংক্রমণ নিয়ে, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার কোনো বিশেষ অঞ্চলের উপভাষাসমৃদ্ধ সংলাপ সহ এক মা, তাঁর শিশু সন্তান ও পাঁচিপিসির মায়াবিদ্ধ গল্প। যশোধরা রায়চৌধুরী ‘দুষ্টুরা’-য় বটলা, জড়ুল, কুটকুটে, ইব্রাহিম ইত্যাদি আরও সব কে কে যেন আছে – তাদের প্রায় স্বচ্ছ ভারত অভিযান আর ‘বটলাকে মারলে জড়ুল কেঁদে ওঠে, এমনই বন্ধুত্ব’-র গল্প। বজ্জাৎ কিশোর বান্টি আর তার সাকরেদ, তস্য বজ্জাৎ এক পোষা ল্যাব্রাডর স্কুবি মিলে এক সকাল চুরমার করার মজাদার গল্প শোনালেন জয়তী অধিকারী। 

‘সম্বিতের সঙ্গে মাত্র দুদিন ডেট করেছি আর তুই সেটা মাকে বলে দিলি?’ – বর্ষা তার দুবছরের ছোটো বোন দিঠিকে বলল একথা, আর শুরু হয়ে, প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়েও শেষ হল না বুবুন চট্টোপাধ্যায়ের কিশোর গল্প ‘প্রেম’। এখনকার কিশোররা এইসব অত্যাধুনিক সংলাপে যথেষ্ট অভ্যস্ত তাই গল্পটি বাস্তবিক ভাবে সফল। ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় খুব সুন্দর একটা গল্প পড়লেন – ‘মিতুলের জলরহস্য’। নয় বছরের ছোট্ট মিতুল একদিন দুপুরবেলা, ঘরের ভিতরে চুঁইয়ে নামা বৃষ্টির জলের উৎস খুঁজতে গিয়ে পেয়ে গেল তার দাদুর হারিয়ে যাওয়া কবিতা লেখার খাতা এবং গল্প এগোল সিনেমার ফ্ল্যাশ ব্যাক ফ্ল্যাশ ফরোয়ার্ড টেকনিকেই।

এই সব পাওয়া হল গত ১লা জুলাই, ২০১৮ বিকেলে ‘দেবভাষা’ নামক একটি মনোরম বই বিপণীতে। দক্ষিণ কলকাতার গোলপার্কের বই আর শিল্পের আবাস এটি। ছিল শ্রীমতী অনিতা মুখোপাধ্যায় এবং শ্রীমতী সুতপা গুপ্তের গলায় মন ভালো করা বর্ষার রবীন্দ্রাগীতি। বিনা যন্ত্রানুসঙ্গে হৃদয়ে মোচড় তোলা গান। এমন ঘরোয়া বৈঠকের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিশিষ্টতা হল, প্রতিটি গল্প পাঠের পরেই গল্পটি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও প্রাসঙ্গিক কথোপকথন। এদিনের গল্প পাঠের বিষয় ছিল লেখিকাদের লেখা ছোটোদের গল্প। আলোচনায় উঠে এল প্রশ্ন – ছোটোদের গল্প মানে কি ছোটোদের জন্যে গল্প, নাকি ছোটোদের নিয়ে গল্প? কবি কিংশুক মণ্ডল ও প্রকাশক পলাশ বর্মন, আলোচনার দায়িত্ব সামলাবার চেষ্টা করলেন অত্যন্ত যথা যত ভাবে। আড্ডার মাঝে মাঝে গল্পের নির্মাণ, তার ভাষা বা শৈলী নিয়ে সামান্য সংশোধনবাদী ফুট কাটাও হল । আর ছিল দুই খুদে কিশোরী, আগমনী এবং স্বাতন্ত্র্রী।  যাদের সুচিন্তিত মতামত গল্পগুলি কে আরও মাত্রা দিল। গল্পের ভালোমন্দ বিচার করেছে তারাও। লেখকদের শুধরনর জায়গা তৈরি হল তাদের জন্য।
শেষে বিস্মিত চোখে ঘুরে ঘুরে দেখলাম দেবভাষার শিল্পের আবাসে স্থিরচিত্রের প্রদর্শনী, যেখানে একদিন ক্যামেরায় চোখ রেখেছিলেন দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। যাঁকে যৌবনের শুরুতেই অকারণ ডেকে নিয়ে গেছে মৃত্যু। তাঁর বিষয়ে শুনলাম তাঁর মা, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপিকার  কথা। শেষের চা, মিষ্টি আর আন্তরিকতায় ঘন এমন যাপন বেশ মনে রয়ে যায়। 






রিভিউ লিখলেন কবি, প্রকাশক পলাশ বর্মণ (কলিকাতা লেটার প্রেস) 


মঙ্গলবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৮

"গল্পবৈঠক-২০" ২য় বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান

  
আমন্ত্রণ পত্রঃ নন্দিনী সেনগুপ্ত 

“মধুর তোমার শেষ যে না পাই, প্রহর হল শেষ” রবীন্দ্রসঙ্গীতটি বড় সুন্দর প্রকাশ করেছিল সেদিনের গল্প বৈঠকের রূপটিকে । চৈত্রের প্রহর শেষের শেষবেলায় কলকাতা সেদিন উপচে পড়েছিল গড়িয়াহাটের সেলে । পরদিন যে বাঙ্গালির প্রিয় ১লা বৈশাখ ! সেই ভিড় পেরিয়ে একটু এগোলেই বাসন্তীদেবী কলেজের পাশে “আমন্ত্রণ” বুটিকের তিনতলায় সঞ্চারী চক্রবর্তীর বাড়ির সুসজ্জিত ছাদে বসেছিল গল্পবৈঠকের দ্বিতীয় বর্ষপূরতি ও বিংশতিতম অনুষ্ঠানের আসর ।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই বৈঠকের আহ্বায়িকা ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় দু কথায় বললেন গল্প বৈঠকের উদ্দেশ্য, তার গত উনিশটি বৈঠকের পথচলা ও আগামীদিনে কিভাবে তিনি এগিয়ে নিয়ে যেতে চান এই বৈঠককে । সমবেত হাততালির মধ্য দিয়ে শুরু হল অনুষ্ঠান । সেদিন বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান বলে গল্পপাঠ ছাড়াও ছিল সঙ্গীত, শ্রুতিনাটক, কবিতা ইত্যাদির আয়োজন । গল্পবৈঠককে ভালবেসে হাজির ছিলেন অনেক দর্শক শ্রোতা বন্ধু । ছিলেন পৃথ্বীশ মুখোপাধ্যায়। ছিলেন প্রখ্যাত লেখিকা কঙ্কাবতী দত্ত । যোগ দিয়েছিলেন সাহিত্যিক পাপিয়া ভট্টাচার্য, তৃষ্ণা বসাক প্রভৃতি আরো অনেকে ।
এবারের অনুষ্ঠান যেহেতু দীর্ঘ, তাই সবাইকে অনুরোধ করা হয়েছিল ২৫০ – ৩০০ শব্দের মধ্যে “রক্ত না ঝরা রহস্য” এই বিষয়ের ওপর অনুগল্প লেখার জন্য । অত্যন্ত ছোট পরিসরে এবং রক্ত না ঝরিয়ে অর্থাৎ No violence – No bloodshed করে রহস্য গল্প লেখা যথেষ্ট কঠিন কিন্তু আজ হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বি – তাই হাসিমুখে সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন লেখকরা ।
প্রথমেই ছিল ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুললিত কন্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত । এরপর সঞ্চালিকা মৌমিতা ঘোষ পড়লেন তাঁর লেখা স্বরচিত সুন্দর একটি কবিতা ও ডেকে নিলেন প্রথম গল্পকার মহুয়া চৌধুরীকে । গল্পের নাম “রহস্যটা সামনে ছিল” । পারিবারিক সম্পত্তি একটি হীরের আংটি চুরি গেছে । অনেক অপরাধের রকম দেখলেই বোঝা যায় এর মধ্যে পরিচিত বা বাড়ির কেউ যুক্ত । এই সুত্র ধরেই শুধু বুদ্ধি দিয়ে কি ভাবে এর সমাধান করলেন হাবু কাকু তাই নিয়েই গল্প । লেখিকার সহজ, ঝরঝরে লেখনীর পরিচয় পাওয়া যায় এই লেখায় ।
অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে চা, আম পোড়ার শরবত, গরম শিঙ্গাড়া – আপ্যায়নের কোন ত্রুটি ছিল না । সেগুলি সহযোগে আবার ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কণ্ঠে দুটি সুললিত রবীন্দ্রসঙ্গীত । শেষ গান “আজি যে রজনী যায় সখী ।“ গানের অভিঘাত কানে বাজতে লাগলো দীর্ঘক্ষণ ! তারমধ্যেই মৌমিতার কবিতা পেরিয়ে গল্প পড়তে এলেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ । গল্পের নাম “কফি @ সি সি ডি” । গল্পটির মধ্যে থ্রিলার চলচিত্রের বীজ লুকিয়ে আছে । দু চারটি কথোপকথনের মধ্য দিয়ে ঘটনার ঘনঘটার মধ্যে হঠাত শ্রোতাকে নিয়ে ফেলেছেন গল্পকার । রুদ্ধশ্বাস গল্পটিতে অপরাধী যখন মনের মানুষ, তখন বিবেকের টানাপোড়েন লেখক দেখাতে চেয়েছেন । গল্প আর একটু পরিসর পেলে হয়তো আরও ভালো হত।
এরপর স্বরচিত কবিতায় নিজে সুর দিয়ে এক নতুন রূপে পাঠ করলেন তমালী রায় । কবিতা ও সুর দুটিই সুন্দর ।


এদিনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল শ্রুতিনাটক । পরিবেশন করলেন “ঊচ্চারণের” তরফ থেকে সুস্মেলী দত্ত, সোমা ঘোষ ও কস্তুরী চট্টোপাধ্যায় । শ্রুতিনাটকের নাম “আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান” । রবি ঠাকুরের মানস প্রেমিকা রানু, সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মানসী নীরা ও এক আধুনিকা রীনার পারস্পরিক কথোপকথন ও তাদের মনোজগতে নিয়ে গেলেন এঁরা – মুন্সিয়ানার সঙ্গে । নতুনত্ব ছিল বিষয় ও পরিবেশনে ।
আবার গল্পে ফিরে আসা । গল্প পড়লেন ডঃ সোনালী । নাম “গল্পের মধ্যেখানে”। এক অদ্ভুত পরাজাগতিক অনুভুতি, মনাস্ট্রি, বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জগত, মিশরের রাস্তাঘাট, শেষে জীবন্ত ড্রাগনের হাতে মৃত পান্নাচোর। স্বল্প পরিসরে  অত্যন্ত লিরিকাল গল্পটি মুহূর্তে আমাদের নিয়ে গেলো অন্য এক জগতে । 
এরপর গল্প পরিবেশন করলেন তপশ্রী পাল । গল্পের নাম “খাদ্য রহস্য”। আমাদের মধ্যে আজ জাতপাত, ধর্মের কত ভেদাভেদ – অথচ শিশুরা এইসব ভেদের কত ওপরে । কেমন করে বাড়ির খাবার দাবার হঠাত হঠাত উধাও হয়ে যাওয়ার রহস্য সমাধান হল একটি শিশুর কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে তাই নিয়েই গল্প । কোন রক্তপাত, কোন হিংসা না দেখিয়েও রহস্য গল্প লেখা যায় ও লেখা প্রয়োজন – একথা আয়োজিকা ইন্দিরা আবারো জোর দিয়ে বললেন এই গল্প পাঠ শেষে ।
অদ্বিতীয়া পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদিকা মৌমিতা তারণ যে রহস্য গল্পটি পড়লেন তার নাম “পাচার” ।  


স্প্যানিশ অনুবাদ
জয়া চৌধুরী এদিন পড়লেন মৌলিক গল্প “পৌষালির বন্ধু” । ড্রাগের নেশা আমাদের শিক্ষিতদেরও কেমন ভয়ঙ্কর ভাবে গ্রাস করছে , ছড়িয়ে পড়ছে মধ্যবিত্ত পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে । সেই ভয়দায়ক বিষয়টি তুলে এনেছেন লেখিকা । কে ছিল বাড়িতে আশ্রিত সেই ব্যাক্তি? শেষ পর্যন্ত মনোযোগ ধরে রাখে গল্পটি ।
জয়তী রায়ের গল্পের নাম “দাদুর রোগ” । দাদুর পেটমোটা হোমিয়প্যাথির বাক্স থেকে কি কি আবিষ্কার করলেন কাকা আর কিভাবেই বা ধরা পড়লো দাদুর রোগ তাই নিয়েই ছোট্ট মিষ্টি গল্প জয়তীর । আমাদের অনেকের বাড়িতেই লুকিয়ে আছেন এরকম অনেক শখের গোয়েন্দা দাদা কিম্বা কাকা – বাঙ্গালীর মনের মধ্যে যে ফেলুদা বাসা বেঁধেছে সেই কবে !
শুনলাম কৃষ্ণা দাসের গল্প “একটি সজীব হত্যার পূর্বে” । মড়ার পচা দুরগন্ধ থেকে কিভাবে গল্প গিয়ে পৌঁছল একটি ফুলে ! তাই তো বলা হয় “ট্রুথ ইজ স্ট্রেঞ্জার দ্যান ফিকশন” ! সত্যিই বৈচিত্রে অনন্য ছিল এবারের গল্পবৈঠকের গল্পগুলি।
এরপর আমাদের সেদিনের হোস্ট সঞ্চারী শোনালেন “দূরে কোথায় দূরে দূরে – “ মুহূর্তে জমজমাট গল্পের আসর থেকে মন উদাস হল সুদূর গগনে মেঘেদের সাথে । মনকে আবার ফিরিয়ে আনলেন ভাস্বতী বন্দ্যোপাধ্যায় । তাঁর গল্প “টক্কর” । অধিবেশনের অন্যতম কৌতুহলোদ্দীপক গল্পটিতে বিবদমান স্বামী স্ত্রী অরিন্দম ও পৃথা । স্বামীর ব্যাবহারে চুড়ান্ত আহত হয়ে স্ত্রী আলাদা থাকেন । কিভাবে শঠে শাঠ্যং হল – স্বামীর ওপর শোধ নিলেন স্ত্রী, তাই নিয়েই গল্প । লেখিকা দেখিয়েছেন মানুষের মনোজগতের বিভিন্ন টানাপোড়েন, গল্পে আছে রহস্য, সঠিক সুত্র ধরে তাঁর সমাধান । বহুমাত্রিক গল্পটির বড় গল্প বা উপন্যাস হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রচুর ।
নন্দিনী সেনগুপ্ত শোনালেন আর একটি অত্যন্ত সুন্দর গল্প । গল্পের নাম “যৌগিক পত্র” । কিভাবে ড্রাগের নেশা আক্রমণ করছে আমাদের কৈশোরকে সেই বিষয়টি আবার ঊঠে এসেছে এই গল্পে । কিভাবে স্কুলের জন্য যৌগিক পত্র তুলতে গিয়ে কুমু আবিষ্কার করে ক্যানা”বিষ” আর বাঁচায় তাঁর দাদাইকে? শেষ অবধি টানটান হয়ে শোনার মত গল্প ।
কৃষ্ণা রায় শোনালেন গল্প “বারুদ” । লেখিকা রহস্যের মোড়কে আবার আমাদের টেনে নিয়ে গেলেন সামাজিক বহু আলোচিত একটি বিষয়ে । মা এর ছেলের ওপর অধিকার বোধ ও ভালোবাসা মাত্রা ছাড়ালে কিভাবে নষ্ট হয় ছেলের জীবন ।
সবশেষে গল্প পরিবেশন করলেন গল্পবৈঠকের আহবাহিকা ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় । গল্পের নাম “দইমাছ”।
কিশোর গোয়েন্দা পুপুল কিছুতেই বুঝতে পারে না ফ্ল্যাট বাড়ির সদর দরজা খুলে এক ভদ্রলোক অত রাত্রে রোজ যান কোথায় গাড়ী নিয়ে । এই কৌতুহল দমন করতে না পেরে বাবাকে ওই গাড়ির পিছু ধাওয়া করতে বাধ্য করল পুপুলের গোয়েন্দা মন । কিন্তু কি আবিষ্কার করল পুপুল? আমাদের একটু উদ্বৃত্ত কত মানুষের প্রয়োজন মেটাতে পারে সেটিই এই মননশীল গল্পের উপজীব্য ।
গল্পের শেষে একের পর এক গান চলল রাত বাড়ার সাথে সাথে – কখনো রবীন্দ্রসঙ্গীত, কখনো দ্বিজেন্দ্রগীতি, লোকগীতি, আধুনিক  শোনালেন সঞ্চারী, ওয়েলস, মৈত্রেয়ী বণিক, জয়িতা রাহা প্রভৃতি সঙ্গীতশিল্পী । সুন্দর কীবোর্ড ও গীটার ছিল সঙ্গে । 



সুদূর রায়গঞ্জ থেকে গল্পবৈঠকের জন্মদিনে কেক নিয়ে এসেছিলেন কবি শর্মিষ্ঠা ঘোষ । কেক কাটলেন অগ্রজ সাহিত্যিক গল্পকার পাপিয়া ভট্টাচার্য । সবশেষে ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের গান “আমায় ডুবাইলি রে আমায় ভাসাইলি রে” আর সঙ্গে  ডঃ সোনালির নাচ সত্যি আপ্লুত করল, ডোবাল, ভাসাল আমাদের আবেগ আর অনুভূতিকে । একটি না ভোলার মত সন্ধ্যা উপহার পেলেন উপস্থিত সবাই । এই আনন্দের মাঝেও আমাদের মধ্যে সেদিন পেলাম না গল্পবৈঠকের সাথী গল্পকার নিবেদিতা ঘোষ মারজিত, বুবুন চট্টোপাধ্যায়, মহুয়া মল্লিক, অনিন্দিতা মন্ডল ও আরো কয়েকজনকে । তবে এদের সবার লেখা ধরা রইল বৈশাখী প্যাপিরাস ই-পত্রিকার পাতায় ।


রিভিউ লিখলেনঃ তপশ্রী পাল   
ছবি সৌজন্যঃ পৃথ্বীশ মুখোপাধ্যায়
      
সংবাদনজর, বুধবার  ১৬ই মে ২০১৮ 

এইসময় শনিবার, ২১ শে এপ্রিল ২০১৮

 

জরুরী কথা

প্রতিবার গল্পবৈঠক শেষে ইনবক্সে মেসেজ ভরে যায়। এবারেও তাই হল। কি করে গল্পবৈঠকে গল্প পড়তে পারি? অনেকবার আগেও বলেছি, আবারো বলছি।
সর্বাগ্রে তিনটি "উ"কে চাই। গল্পকার বন্ধুকে হতে হবে উপকারী, উপযোগী, উতসাহী।
আমাদের অনুষ্ঠানের কোনো মেম্বারশিপ চাঁদা নেই।
এখানে অনুষ্ঠান মূলতঃ কোয়ালিটির ওপর বেস করে হয়।
কোয়ান্টিটি তে প্রাধান্য দেওয়া হয় না।
আমরা সম্মাননা জ্ঞাপন করিনা। 
আমাদের প্রতি অনুষ্ঠানে নতুন নতুন থিম আর সীমিত শব্দসীমার মধ্যে ছোট ছোট গল্প লেখাটাই প্রধান উপজীব্য বিষয়। আর?
অন্ততঃ গল্পকারের একটি গদ্য সংকলন থাকাটা বাঞ্ছনীয় unless তিনি অনেকদিন কবি অথবা সম্পাদনা, সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত। 
প্রিন্ট অথবা ওয়েব পত্রিকায় অন্ততঃ দুটি গল্প প্রকাশিত হওয়াটা বাঞ্ছনীয়।
গল্পটি যেন পাঠযোগ্য হয়।
পাঠ যেন শ্রুতিমধুর হয় এবং স্পষ্ট উচ্চারণ হয়।
আর ওপরের ক্রাইটেরিয়া গুলি সব ফুলফিলড হলে শ্রোতা হয়ে আসতে হবে আপনাকে অথবা কোনো কাজে অংশ নিতে হবে।
তারপর আমরাই ডেকে নেব আপনাকে একদিন। শুধু নিজের গল্পটি পড়লাম আর চলে এলাম হলে চলবে না। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তাকে অনুষ্ঠানের রিভিউ লিখতে হবে। কোথাও সেটি প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। সঞ্চালনার দায়িত্ত্ব নিতে হবে দরকার পড়লে। তার চেনা পরিচিত কোনো আলোচক কে নিমন্ত্রণ করে আনতে হবে।
প্রত্যেক অনুষ্ঠানে বিদগ্ধ আলোচক থাকেন। তাঁর আলোচনা নেবার মত শক্তি সঞ্চয় করতে হবে। 
এবার প্রস্তুত তো? 

মঙ্গলবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৮

গল্প বৈঠক - ১৯ বিষয়ঃ স্বরচিত অ্যাডাল্ট থিমের গল্প

ণিশতম গল্পবৈঠকের প্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রাপ্তমনস্ক অধিবেশন বসেছিল দক্ষিণ কলকাতার রাজডাঙায় শ্রীমতী তপশ্রী পালের বাড়িতে। এবারের বৈঠক আদ্যন্ত নারীপ্রধান এবং লেখিকাদের উপস্থিতিতে উজ্জ্বল। সাহিত্যিক কণা বসুমিশ্র প্রায় প্রতিবারের মতই এবারেও উপস্থিত ছিলেন।
মোট আটজন গল্পকার এবারে গল্প বলেছেন। আলোচনায় ছিলেন অদ্বিতীয়া পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক মৌমিতা তারণ এবং সিস্টার নিবেদিতা গার্লস কলেজের বাংলার বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপিকা মণিদীপা দাস। সঞ্চালনায় মৌমিতা ঘোষ কথার ফাঁকে ফাঁকে দু এক লাইন স্বরচিত কবিতায় ভরিয়ে দেন গল্পপাঠের সন্ধ্যা।


প্রথম গল্পকার ছিলেন বুবুন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর গল্পের নাম ছিন্নশোক। গল্পের বিষয় এক মধ্যবয়সী যৌবন অতিক্রান্ত দম্পতি। প্রকৃতির নিয়মে স্ত্রী তাঁর মেনোপজ আক্রান্ত দেহে অনুভব করেননা মিলন সুখ। স্বামীও এন্ড্রোপজকেই ভবিতব্য জেনেছেন। আপাত সুখী দাম্পত্যে অবিশ্বাস নেমে আসে স্বামীর মৃত্যুতে। স্ত্রী জানতে পারেন, যৌবন তাঁরই গিয়েছে। স্বামী তাঁর অজান্তে পরকীয়াতে রত ছিলেন। স্ত্রীর এই শোক স্বামীর মৃত্যুশোককে ছাপিয়ে যায়।


দ্বিতীয় গল্পকার আইভি চট্টোপাধ্যায়। গল্পের নাম নিকুঞ্জ। ভারী মরমী গল্প। এটিও এক দম্পতির গল্প। যেখানে স্বামী আবিষ্কার করে যে স্ত্রী আসলে সমকামী। অথচ, যে কোনও কারণেই হোক, সেইটি সে নিজেও বোঝেনি। জানার পর প্রাথমিক দুঃখবোধ দুজনকেই ভারাক্রান্ত করে । কিন্তু স্বামীর কাছে প্রেম এক অন্য রূপে আসে। স্ত্রীর অসময়ে সে পাশে থেকে যায়।
তৃতীয় গল্পকার তপশ্রী পাল। তাঁর গল্পটির নাম প্রথম রিপু। আদ্যন্ত কমেডির মোড়কে এটিও এক দম্পতির মধ্যবয়সের সেক্সুয়াল ইনকমপ্যাটিবিলিটির গল্প। শেষ পর্যন্ত যা শেষ হয় পুরুষটির অনিবার্য এক মোহ ও পাপের মধ্য দিয়ে। বাস্তব ঘটনা গল্প হয়ে উঠেছে। 
 চতুর্থ গল্পকার ভাস্বতী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর গল্পের নাম সাপ। এটিও এক দম্পতির গল্প। শীতল স্ত্রীকে সন্দেহ করে  স্বামী। সেই সন্দেহের প্রতীক যেন সাপ। সাপের হিসহিস শব্দ যেন তার নিজের বুকের ভেতর। শেষ পর্যন্ত গল্পের উত্তরন ঘটে। স্বামী যখন পিতা হয়ে ঘুমন্ত স্ত্রীর অবয়বে নিজের আত্মজাকে  দেখতে পায়।
পঞ্চম  গল্পকার অনিন্দিতা মণ্ডল। গল্পের নাম উন্মেষ। গল্পটি একটি মুক্ত  সম্পর্কের গল্প। যেখানে দুটি ভাই সম্পূর্ণ বিপরীত স্বভাবের। উদ্দাম পৌরুষ যার, সেই ভাইকে প্রত্যাখ্যান করে নরম স্বভাবের অন্য ভাইকে আপন করে নেয় এক নারী। অবাক নারীর বিস্ময়কে সত্যি প্রতিপন্ন করে যে পুরুষ বলে, সে জীবনে প্রথম যে মেয়েটিকে দেখেছে, সে তার মা।
ষষ্ঠ গল্পটির নাম ও সাপ। গল্পকার মহুয়া মল্লিক। বলিষ্ঠ এক গল্পে গল্পকার জানিয়েছেন ব্যাভিচারিনী এক নারীর যৌন অতৃপ্তি ও তৃপ্তির সন্ধিক্ষণ। এখানে সাপ যৌন কামনার অনুষঙ্গে উঠে এসেছে।
সপ্তম গল্প নিমমঞ্জরী। গল্পকার কৃষ্ণা রায় সমাজের চিরাচরিত এক কষ্টের কথা বলেছেন। যেখানে ধর্ষিতা তার জনককেই চিহ্নিত করে ধর্ষক হিসেবে। আর তার এই কষ্ট থেকে বার করে আনার জন্য তার স্বামী মনোবিদের পরামর্শ মানে। মেয়েটি তার জীবনের অন্য প্রধান পুরুষটির হাত ধরে বেরিয়ে আসতে থাকে আলোয়। ধর্ষিতার একটি পাপবোধ কাজ করে। যা থেকে মুক্ত হতে পারলে সে আসলে পেরিয়ে যায় অন্ধকার।


অষ্টম গল্পটি গল্প বৈঠকের মূল হোতা, ইন্দিরা  মুখোপাধ্যায়ের। গল্পের নাম তিন কন্যা। তিনটি দুঃখিনী মেয়ের গল্প। তিন বোন। বাবা মা যখন দালালের সঙ্গে মিলে তাদের বিক্রি করে দেয়। আর তাদের নিষ্ঠুর পরিণতি যা হতে পারে তাই। একটি বোন বেশ্যা পল্লী থেকে পালিয়ে যেতে গিয়ে হারিয়ে যায়।শহরের "মিসিং গার্লের দলে নাম লেখায়। একটি ঠাই পায় নিষিদ্ধ পতিতা পল্লীতে। সয়ে  যায় তার। আর সবচেয়ে বড় বোন খাল পাড়ের বস্তিতে থাকে। দিন গুজরান করে কয়েক বাড়ি পরিচারিকার কাজ করে। শেষ পর্যন্ত সেও ভেঙে পড়ে প্রৌঢ় মালিকের কাছে। রাত্রিতে তাকেও খুশি করতে হয় ধাবার ড্রাইভার খালাসিদের। নইলে বস্তিতে থাকা চলেনা। নিরুপায় সে আশ্রয় চায় সামাজিক ভাবে নিরুপায় এই মানুষটির।
গল্প বৈঠকের এই অধিবেশন আক্ষরিক অর্থেই প্রাপ্তমনস্ক। মনস্তত্ব জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে প্রতিটি গল্পে।
আগামীতে আরও উন্নত হোক ধারালো হোক বৈঠকি কলম।উঠে আসুক নতুন নতুন গল্প। 


প্রতিবেদনঃ অনিন্দিতা মণ্ডল

বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

অষ্টাদশী গল্পবৈঠক


অয়ন চৌধুরী

প্রদীপ গুপ্ত ( যুগ সাগ্নিক পত্রিকা)
যেন সমাপতন। গল্পবৈঠকের ১৮তম সম্মেলন পড়েছিল ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৮ তারিখে।স্থান : গান পয়েন্ট ক্যাফে। মনোহরপুকুর রোড। কলকাতা।  রিভিউ লিখলেন জয়তি রায়। 

‘গল্পবৈঠকের’ আসরে প্রথমবার গিয়ে কবি সুকান্তর কবিতার সেই বিখ্যাত লাইনটি মনে পড়ে যাচ্ছিল।

   "আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়"
ঠিক তাই সাবালিকার ভয় কি পথচলায়?

গল্পবৈঠকর আঠারোতম সম্মেলন ছিল সেদিন । ফাগুনের মাতাল দুপুর, খোলা বাতাবরণ, রঙ্গীন মনের এক গুচ্ছ নবীন লেখককে দেখে  মনে হল, আঠারো বসন্তের স্পর্ধা নেমে এসেছে ওখানে। উপলব্ধি দেরিতে হলেও বুঝলাম ,স্থানটিও একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে রয়েছে। খোলামেলা, সুন্দর আলো, বসবার জন্য ছড়ানো ছিটানো চেয়ার গুলি, অপূর্ব এক আড্ডা হাওয়া মহল তৈরি । আয়োজক লেখিকা ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়।

উপস্থিত ছিলেন আরো এক ইন্দিরা। তিনি একাধারে সুগায়িকা ও সঞ্চালিকা ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় । সভাকে বেঁধে রেখেছিলেন নিপুণভাবে। সবকটি গুণী সদস্যের উজ্জ্বল উপস্থিতি সভাকে একটি অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিল।

সঞ্চালিকা এবং গায়িকা ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়


 এবারের গল্পের বিষয় ছিল: প্রেম ও সম্পর্ক। বাঁধাধরা শব্দসীমার মধ্যেও প্রত্যেক লেখক পরিবেশন করলেন, টানটান, সংবেদনশীল, বলিষ্ঠ বক্তব্যপূর্ণ  নিজেদের গল্প। শুরুতে এবং মধ্যে মধ্যে ইন্দিরার রবীন্দ্রসংগীত, আলোচকদের আলোচনায় ভরপুর সভাটি দেখে মনে হচ্ছিল, সাহিত্যের মধ্যে দিয়ে স্বয়ং ঈশ্বর নেমে এসেছেন।

মোট এগারটি গল্প পাঠ হল। প্রত্যেকটি গল্প ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যে, বক্তব্যের বলিষ্ঠতায়, ভাষার সাবলীলতায় এবং পরিচ্ছন্ন শব্দ চয়নে উজ্জ্বল। প্রেম, বিরহ,পরকীয়া, মা ছেলে, শাশুড়ী বৌমা -- চিরাচরিত সম্পর্কের টানাপোড়েন, প্রকৃতির নিখুঁত বর্ণনা--

প্রেম ও সম্পর্কের নানা দিক দিয়ে ভরপুর গল্পগুলি শুনতে শুনতে মুগ্ধ নির্বাক শ্রোতারা এক কথায় মধুর মৌমাছির মত আটকে বসে ছিল।

মাঝে মাঝে গল্পগুলি নিয়ে সুন্দর আলোচনা করছিলেন, প্রদীপ গুপ্ত(সম্পাদক যুগ সাগ্নিক)
এবং অয়ন চৌধুরী (সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ)

 

সুকল্যাণ চৌধুরী
জয়তি রায়
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
ভাস্বতী বন্দ্যোপাধ্যায়
সোনালী

তমালী রায়
তপশ্রী পাল

বুবুন চট্টোপাধ্যায়
কৃষ্ণা রায়


মহুয়া মল্লিক
আর উপস্থিত ছিলেন  সুকল্যান চৌধুরী-- আমাদের গুণী বন্ধু । হঠাৎ এসে পড়ে, মুগ্ধ করলেন গানে ও মনোগ্রাহী আলোচনায়।

আসরের প্রথম গল্পটি পাঠ করলেন, নন্দিনী সেনগুপ্ত। গল্পের নাম - খেলা। একটা খেলার মধ্যে দিয়ে গল্পটি বুনে উঠেছে। খেলাটি হল-- বাংলা ছাড়া অন্য শব্দ বললেই ফাইন হবে। রাকা আর সুমন্ত্র আর চাঁদিপুরের মধুচন্দ্রিমা যাপনের মধ্যে টুকরো টুকরো সংলাপ দিয়ে তৈরি এক পরিপূর্ণ ছবি। দুদিন পরেই একুশে ফেব্রুয়ারী। ভাষা দিবস। সেই প্রেক্ষিতে,গল্পের শেষে যখন , সুমন্ত্র বলে-- থ্যাংক ইউ।”
রাকা বলে যে, দুবার টাকা দিতে হবে। কেন না,দুটি ইংরেজি শব্দ বলা হয়েছে। শেষটি অতি সুন্দর। গল্পের নাম খেলা অতি সুপ্রযুক্ত।

কৃষ্ণা দাস
নন্দিনী সেনগুপ্ত


জয়তী রায়ের একলা ফাগুনে -- ঘটনার ঘনঘটা বা বর্ণনার বিস্তার নেই। এক একলা মনের দিকশূন্যপুর যাওয়ার প্রবল ইচ্ছে বাঁধা পড়ে আছে সংসার ধর্মের শিকলে, তাই নিয়ে এক কাব্যধর্মী অনুগল্প বলা যায়।

কৃষ্ণা দাশের খাদান গল্পে তুলে এনেছেন কয়লা খাদানের চরিত্র-- “বাবার মৃত্যুর পর দিন গুলি কয়লা গুঁড়ির মত কালো হয়ে যাচ্ছে।’ প্রাঞ্জল বর্ণনা, ধেনো মদ, হাতে সোনার বালা চক চক ,কয়লা মাফিয়ার রূপ ফুটে ওঠে। খাদান নামটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকল  নরনারীর সম্পর্কের অতল গভীর খাদানের মত রহস্য। কৃষ্ণার গল্পের সাবলীল রূপ মুগ্ধ করে।

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের উড়নচন্ডী গল্পে মা পদ্মা আর উত্তরদিশায় কুড়িয়ে পাওয়া মেয়ে উত্তরার মধ্যেকার সম্পর্কের টানাপোড়েন, একে অন্যের প্রতি মমতা, দায়িত্ববোধ আর তার মধ্যে এসে পড়ে বস্তি, নিম্ন শ্রেণীর সমাজ, কেমন ভাবে শোষিত হয় ‘বাপী’র মত মানুষদের কাছে। যারা অসহায় মা মেয়ে দুজনকেই ছিঁড়ে খায়। কিশোরী বয়সের খিদে, পড়াশুনো করার অদম্য ইচ্ছে থেকে উত্তরা বাপিকে কাছে ঘেঁষতে দিলেও সখেদে বলে
বাপীদা এগরোলও কিনে দেয় না!” সমাজ, এবং সম্পর্ক হাত ধরাধরি করে এই গল্পে উঠে এসেছে এই গল্পে ।

আলোচক দুজন প্রদীপ গুপ্ত এবং অয়ন চৌধুরী সদা সতর্ক থেকে নিজেদের মূল্যবান মতামত দিচ্ছিলেন। পাঠ করা নিয়ে অয়ন বলতে চাইলেন "গল্প লেখার মত ,পাঠ ও সুন্দর হবার দরকার আছে” 

প্রদীপ দা সুন্দর করে বোঝালেন যে, ইন্দিরার এই গল্পটির মধ্যে লুকিয়ে থাকা আগামী উপন্যাসের সূত্র।

বলে রাখা ভালো,গল্প পড়ার ফাঁকে ফাঁকে মাঝে মধ্যেই সংগীতশিল্পী ইন্দিরার গলার রবীন্দ্রসংগীত শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল এক অন্য ভুবনে পৌঁছে গেছি। সংগীত আর সাহিত্যের এই অপূর্ব মেল বন্ধন সম্ভব হয়েছিল, গল্প বৈঠকের কান্ডারী লেখক ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের জন্য। ওনাকে মাইকের ব্যবস্থা, সুস্বাদু জলখাবারের ব্যবস্থা, সবার সব রকম কথা শুনে মিষ্টি করে হেসে উত্তর দেওয়ার পরে অনুষ্ঠানকে তর তর করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া কি করে সম্ভব হল, ভেবে আমি /আমরা যথারীতি মুগ্ধ হচ্ছিলাম।

ভাস্বতী বন্দ্যোপাধ্যায়ের  "প্রেম” নামের গল্পটিতে সম্পর্ক এবং প্রেম দুটিই যেহেতু অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, তাই দুটো দিকই এই গল্পে ফুটে উঠেছে সুচারু ভাবে। কাজের মেয়ে তার জীবনের গল্প বলে। কেমন করে তার চেয়ে বয়সে অনেক বড় স্বামী তাকে মদ খেয়ে মারধোর করে। প্রথম পক্ষের এক বউও আছে আবার। তবু সে স্বামীকেই, তার মরদকেই ভালোবাসে। এক অদ্ভুত টান। যার জন্য বাকি সব না পাওয়া তুচ্ছ হয়ে যায় তার কাছে! শুনতে শুনতে ভাবি, কত সামান্য ত্রুটি তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের সম্পর্কককে ভেঙে চুরমার করে দেয়। আর এই কাজের মেয়েটি ? কোনো শর্ত ছাড়াই সে কেবল ভালোবাসে। love for love's sake। নিজের থেকেও সেই মাতাল স্বামীর সুখ তার কাছে বড়। সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা, ভাস্বতীর এই গল্পটি তার নামের মতই সার্থক।

গল্প পাঠ করলেন বুবুন চট্টোপাধ্যায়: গল্পের নাম “মায়া”। আসরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্প বলা যায়। প্রথমেই ধাক্কা খাই, গল্পের বিষয়বস্তুতে। বিদেশে থাকা সন্তানের প্রয়োজনে দেশ থেকে মা বাবাকে যেতে হয় বিদেশে। সেখানে যাবার পরে কুরে কুরে খায় একাকীত্ব। বুবুন বাড়তি কথার মধ্যে যান নি, অতিরিক্ত ভাবাবেগ, শব্দ প্রয়োগ কিছুই না করে, সামান্য সামান্য মোচড়ে ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন এমন ভাবে যে, গল্পের শেষে এসে সোনালী মাছের ল্যাজ ঝাপটে ঘুরে তাকানোর মধ্যে দিয়ে বোঝা যায়, মায়ের বুকের ভেতর “কেউ’ যে ডাকছিল ,সে আসলে তার নিজের চেনা পরিবেশ। অনবদ্য।

তপশ্রী পালের "সেই সাগর বেলা" গল্পে পঞ্চাশ পেরোনো নায়িকা মনে করছে তার ফেলে আসা মধুচন্দ্রিমার দিন গুলির কথা। সে যেতে চেয়েছিল পাহাড়ে, স্বামী নিয়ে এলো সাগরের কূলে। নামী দামী হোটেলের স্বাচ্ছন্দ্যে তর তর করে কেটে গেল দিনগুলি। মন থেকে মুছেও গেল পাহাড়ে না যাবার অভিমান। তবে, একদিন এক বিপদ ঘটতে যাচ্ছিল। গল্পটির ছোট ছোট মুহূর্ত গুলি ভারি সুন্দর। যেমন কলার খোসায় পা পিছলে পড়ে নায়িকা লেখনীর ব্যাগ খুলে বেরিয়ে এলো হাজার কসমেটিকস। ফ্লুরিসে বসে সংলাপ আর লেখনীর খুনসুটি।
হোটেল বা অন্য কোনো জায়গার নাম প্রকাশ্যে না বলাই ভালো, এমনতর বক্তব্য রাখলেন আলোচক তপশ্রীর গল্প পাঠের শেষে।

সোনালীর গল্পকে বলা যায় তার ধারাবাহিক উপন্যাস  “ল্যাপটপ আর হাভেলীর গল্প” থেকে নেওয়া এক টুকরো অথচ সম্পূর্ণ ছবি, তার নাম “হাভেলীর গল্প”
গল্পে রিন রিন করে বাজে মিষ্টি প্রেমের সুর। খাড়ি হিন্দী, রাজস্থানী উর্দু শব্দের যথাযথ ব্যবহার গল্পে এনেছে অন্য মাত্রা। গল্পের নায়িকার নাম সোহিনী। নামটি উচ্চারণ মাত্রেই যে গভীর মিষ্টি রাগ সংগীত মনের আকাশে ফুটে ওঠে, নায়িকা তেমনই সুন্দর। অসাধারণ চিত্রকল্প এই গল্পের। সোনালী যেন অক্ষরের তুলিতে ফুটিয়ে তুলেছেন রাজস্থানী রঙ্গীন জীবন। তখন বিকেল নামছিল ধীরে ধীরে। মন্ত্রমুগধ শ্রোতারা ডুবে যাচ্ছিলাম হাভেলীর ছায়াঘন রহস্যে।
চা পানের বিরতির পর শুরু করলেন অধ্যাপিকা কৃষ্ণা রায়।  তাঁর ছোট গল্পের নাম ‘নষ্টচন্দ্র’। আমাদের আড্ডায় তখন হ্যারিকেনের মধ্যে জ্বলে উঠেছে হলুদ আলো। পরিবেশ আরো সুন্দর। খুব উপযুক্ত। নষ্টচন্দ্র গল্পটি অসাধারণ মনস্তাত্বিক বুনোটের উপর ভিত্তি করে লেখা। নিছক শাশুড়ি বৌমার দ্বন্দ্বের কাহিনী নয় । এখানে এসেছে অস্তিত্বের সংকটের কথা। কাহিনীতে অঙ্ক বিষয়টিকে কেন্দ্র করে দুটি নারীর কথা। যারা দুজনেই অঙ্ক ভালোবাসে। দুজনে নিজের মত করে বিষয়টিকে বোঝে। দুজনের জায়গায় দুজনে অনড়। জীবনের অঙ্ক মেলাতে পারেনা কেবল স্ত্রী আর মায়ের মাঝে থাকা পুরুষটি। গল্প শেষ হবার পরে কিছুক্ষন চুপ করে থাকতে হয়। সঠিক শব্দসীমার মধ্যে খেলা করে কৃষ্ণার জাদু কলম মনের মধ্যে এক চাপা দীর্ঘশ্বাসের সৃষ্টি করে। আর পাঠটিও যথা যত।

তমালী রায়ের গল্প “আমার সকলই নিয়ে” প্রেম এবং সম্পর্কের গল্প। অসাধারণ সংলাপ এবং লেখার মসৃন ভঙ্গি বজায় রেখে তমালী দেখিয়েছে, কিভাবে দাম্পত্য প্রেমে আসে তৃতীয় ব্যক্তি। এই সঙ্গে নাসির আর পিয়াসার সম্পর্ক তুলে আনে মুসলিম সমাজের একটি দিক। বিষয় বৈচিত্র্য, চরিত্র চিত্রণ অসামান্য দক্ষতায় ফুটে উঠলেও, আলোচক সামান্য আপত্তি করেন, গল্পের মধ্যে গান রাখা এবং ইংরেজী শব্দের ব্যবহার নিয়ে।

এই পর্যন্ত  যতগুলি গল্প শুনেছি, প্রত্যেকটি গল্পকে আলাদা করে লেখা উচিত বলে মনে করি। ঠাস বুনোন, জীবন্ত চরিত্র চিত্রণ, উপযুক্ত সংলাপ সৃষ্টি, পরিবেশ প্রকৃতির যথাযথ বর্ণনায় পূর্ণ প্রতিটি গল্প আলাদা মনোযোগের দাবী রাখে।

প্রকৃতি পরিবেশের সার্থক উদাহরণ শেষের গল্প

 দৃশ্যান্তর। লিখেছেন মহুয়া মল্লিক।

ট্রেনের ডেইলি প্যাঞ্জারের জীবন যাত্রা। ট্রেন চলছে। পলকে বদলে যাচ্ছে জীবনের ছবি। ছুটছে ট্রেন। কখনো ধীরে কখনো দ্রুত। দেখা যাচ্ছে উকুন বাছে এক মেয়ে, সংসার , হাঁড়ি কুড়ি, ছেলে মেয়ে, খেজুর গাছের রস , মান অভিমান মিলিয়ে মিশিয়ে এক নিটোল ছবিকে দেখে নিজেকেই যেন খুঁজে পায় সুলগ্না। তার প্রেম এবং প্রতারণার কষ্ট ওই ট্রেনের কামরায় ঘটে যায়, তারই প্রতিরূপ যেন ওই মেয়েটির সংসার।  একটুকরো নির্মম সমাজ -ছবি  দেখতে পাই ,  সুলগ্নার  প্রতি কামরার সহযাত্রীদের টিপ্পনীতে। হতাশা - আক্রান্ত সুলগ্নার সামনে আবার দাঁড়ায় ওই মেয়েটি তার সুখী জীবন নিয়ে। তাই দেখে সুলগ্নাও ফিরে পায় মনের জোর।

গল্পটির, বিশেষত্ব তার চলনের মধ্যে এবং শেষের পজিটিভ দর্শনের মধ্যে।
এর পরে, সুগায়িকা ইন্দিরার একটি অনবদ্য মুক্ত গদ্য পাঠ ও গানের সুরে আসর মেতে ওঠে ফাগুন হাওয়ায়। চমক বাকি ছিল । নতুন অতিথি সুজাতার কণ্ঠে একটি ঝলমলে লোকগীতি হঠাৎ কানে এসে বেজে, প্রাণে দোলা লাগিয়ে দিল।
সুস্বাদু জলখাবার এসে গেল। সবশেষে, এবার বিদায়ের পালা। কোথায় যাবো? যাচ্ছি বটে, কিন্তু আবার যেন ফিরে আসতে পারি গল্প বৈঠকের আসরে। এমন প্রতিশ্রুতির আদান প্রদানের মধ্যে দিয়ে শেষ হল-- আঠারোতম গল্প বৈঠকের আসর।



শুক্রবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৮

২০১৮ য় প্রথম গল্প বৈঠক

ত ২৪শে জানুয়ারি, ২০১৮ অনুষ্ঠিত হল গল্পবৈঠকের সপ্তদশতম সাহিত্য বাসর। আনন্দের চাঁদের হাট বসেছিল ইছাপুর মণ্ডল রাজবাড়িতে । ঐতিহ্যমণ্ডিত এই বাড়িতে শীতের নরম দ্বিপ্রাহরিক রোদ্দুরে গা এলিয়ে নেমে এলো গল্পেরা, তার সাথে পরম সুখে মাথা নেড়ে তাল দিল গঙ্গাতীরের মৃদু বাতাস। যারা গল্পবৈঠকের সাথে জড়িত, সবাই জানেন যে এখানে যারা আসেন, গল্প এবং শুধুমাত্র গল্পের টানেই আসেন। অন্য কোনও বিশেষ আকর্ষণ যেমন পত্রিকায় গল্প ছেপে বের হওয়া বা বিশেষ কোনও পুরস্কার প্রদান, সম্মাননা প্রদান, বই প্রকাশ... এসব কোনও কিছুর সাথে গল্পবৈঠক বা গবৈ-এর কোনও সম্পর্ক নেই।

মধ্যাহ্নভোজনের পরে ঘরোয়া এই বৈঠক শুরু হল অতিথি গল্পকার শতদ্রু মজুমদারের গল্প ‘কবি ও কবিতা’ দিয়ে। কাব্যপাঠের এক আসরে গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র এক কবির কবিতার খাতা হারিয়ে যাওয়াকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে গল্পের ঘটনাবলী। কবির সন্দেহ, মানসিক দোলাচল, কবিতার পাণ্ডুলিপি হারানোর কষ্ট এসব অনুষঙ্গের মধ্য দিয়ে যেন লেখক বর্তমান সময়ের কাব্যলক্ষ্মীর দৈন্যদশার কথাই ব্যক্ত করলেন কিছু ব্যঙ্গের মোড়কে।

দ্বিতীয় গল্পকার ছিলেন প্রদীপ গুপ্ত। গল্পের নাম ‘বসন্তপূর্ণিমার খোয়াব’। চাঁদ এবং এক পাগল বাউলকে কেন্দ্র করে নেমে এলো এক স্বপ্নালু আবেশ। লেখার কাব্যিক শৈলীর মধ্য দিয়ে জ্যোৎস্নার আলো এসে যেন মুছে দিল বাস্তব এবং কাল্পনিক জগতের সীমারেখা। গল্পের শেষে চন্দ্রোদয় বয়ে নিয়ে আসে নতুন আশাবাদী ইঙ্গিত।

তৃতীয় গল্পে নিবেদিতা ঘোষ মার্জিত বললেন একটি মেয়ের গল্প। আমোদিনী কেন্দ্রীয় চরিত্র হলেও, এই গল্পেও চাঁদ একটি উল্লেখযোগ্য পার্শ্বচরিত্র, কারণ গল্পের নাম ‘চন্দ্রবিদ্ধা’। সত্যিই কি চাঁদ আমোদিনীকে উন্মাদ করে দেয়? নাকি সংসারের চার দেয়াল থেকে পথে বেরিয়ে জন্ম হয় আরেকটি নতুন মেয়ের, যে দূর থেকে পরম আমোদে পর্যবেক্ষণ করে জগতসংসার। সাধুভাষায় লেখা এই গল্পের জোরালো বার্তা পাঠক এবং শ্রোতামণ্ডলীকে ভাবতে বাধ্য করে।

চতুর্থ গল্পকার ছিলেন বিখ্যাত সাহিত্যিক কণা বসু মিশ্র; পড়লেন হার-না-মানা চিরযুবক মানুষের গল্প ‘সৌম্যকান্তি’। তিনি কোনওভাবেই মেনে নিতে চাননা তার বয়স বাড়ছে। টুকরো টুকরো খুশি রীতিমত হিসেব করে কুড়িয়ে বাড়িয়ে, সাজিয়ে নিতে চান বেঁচে থাকার আনন্দ। সংসার আড়ালে হাসে, তাল রাখতে পারেনা তার অদম্য ইচ্ছের সাথে, কিন্তু তাতে সৌম্যকান্তির বয়ে গেলো। আকর্ষক নানা সংলাপের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলা গল্পের পরিণতি চরম মুহূর্তে পৌঁছায়, যখন সৌম্যকান্তি নিজের বুড়োটে প্রতিবিম্বকেও আয়নায় লাথি মেরে অস্বীকার করেন।


 পঞ্চম গল্প ‘পরবাস’এ কস্তূরী চট্টোপাধ্যায় বিবৃত করেন একটি মেয়ের কথা। শিশুকালে, কিশোরীবেলায় উদারমন মা’কে সংসারে এমনকি নিজের অধিকারটুকুও দাবী করে নিতে দেখেনি বন্যা। হয়তো তাই সে নিজেও কোনওকিছু আঁকড়ে ধরেনা সেভাবে, বরং অসুখী সংসার-জীবনের অজস্র না-পাওয়ার মধ্যে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় থাকে কখনও না-যাওয়া, এক অগম্য প্রবাসের। সহজ ভঙ্গিমায় লেখা এই গল্প টেনে রাখে, শ্রোতারা একাকার হয়ে যায় বন্যার সাথে, আশায় জাগে মন, তার অনাগত প্রেমের জন্য।

পরবর্তী গল্পকার তমালী রায় তার ‘অন্তর্লীনা’ গল্পে শুনিয়েছেন এক নারী দেবদত্তার কথা, যার অন্তর্জগত হঠাৎ টলে যায় মনোরোগে। ছাত্রজীবনে প্রিয় বন্ধু গুঞ্জন ছিল লেখালেখি এবং সৃষ্টিকর্মের অনুপ্রেরণা। মৃত্যু তাকে কেড়ে নিলেও, সেই বন্ধুর দেওয়া নাম ‘ভ্রমর’ এর মধ্যে সুপ্ত নিজেরই অস্তিত্ব যেন অতীত থেকে ফিরে এসে তৈরি করে এক দ্বন্দ্ব। অবশেষে সেই দ্বন্দ্ব থেকে বেরিয়ে আসার কথা সরল অথচ মনোগ্রাহী ভাষায় বলেন গল্পকার।

অনিন্দিতা মণ্ডল তার ‘পুতুল’ গল্পে সহজভাষায় ব্যক্ত করেন যাদুবাস্তব। গায়ক পার্থর সঙ্গে চিত্রকর/ভাস্কর যীশুর বন্ধুত্বকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে কিছু নারী দাঁড়িয়ে থাকে শিল্পসৃষ্টির মায়াজগতের সাথে বাস্তবের সীমানা জুড়ে। এদের অস্তিত্ব পার্থর কাছে ইন্দ্রিয়াতীত মনে হয়, চিনেও চিনতে পারেনা। সবাইকে যেন যীশু বশ করে পুতুল বানিয়ে রেখেছে বলে মনে হয় তার। একসময় সে নিজেও একাকার হয়ে যায় যীশুর সৃষ্টির সাথে।

কৃষ্ণা দাস তার ‘গোপনীয়’ গল্পে বলেন দীর্ঘ দাম্পত্যজীবনের চড়াই-উতরাইয়ের মাঝে থাকা এক নারী আদিরার কথা। সংসারে সবকিছুর সাথে মানিয়ে নিতে নিতে আদিরা হয়তো নিজের ভালোবাসাটুকুও চিনতে পারেনা। প্রতিশোধের গোপন খেলা কি তার নিজের সাথেই? স্বামী অরিন্দমের মাথার নিচের বালিশ ঠিক করতে করতে নিজেকেই সে আশ্বাস দিতে চায়, ‘ভালোবাসি না, একটুও না।’ মায়া জাগিয়ে শেষ হয় এই গল্প।

ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় তার ‘পূর্বপুরুষ’ গল্পে বলেন আধুনিক সমাজের এক পুরুষের কথা, যে সবার নেতা হয়ে উঠতে চায় যেন আদিম পশুর দলের গোষ্ঠীপতির মতো। আধুনিক শিক্ষাদীক্ষা সত্ত্বেও মানুষ অতিক্রম করে উঠতে পারেনা জিনের মধ্যে গ্রথিত থাকা তার পূর্বপুরুষ শিম্পাঞ্জির প্রবৃত্তি। নেতা হবার জন্য সে এমনকি অন্য কাউকে খুন করে নিজের পথের কাঁটা পরিষ্কার করতে চায়। সমান্তরাল ভাবে চলতে থাকা টেলিভিশান চ্যানেলের স্টোরি এবং গল্পের নায়কের মনের দোলাচল শ্রোতাদের বিশেষভাবে স্পর্শ করে।

এই গল্পবৈঠকে ভিন্ন স্বাদের অনুবাদ গল্প নিয়ে এলেন জয়া চৌধুরী। এলেনা পনিয়াতৌস্কার স্প্যানিশ গল্প ‘পরিচয়’ পাঠ করে শোনালেন। সুন্দর পঠনভঙ্গিমায় শ্রোতারা সবাই যেন গল্পের নায়কের সাথে চাষির ট্র্যাক্টরে চড়ে সঙ্গী হলেন পাহাড়ের পথে। উপত্যকা পেরিয়ে গল্প পৌঁছায় এক উত্তরণের দিকে, যখন গল্পের নায়কের কাছ থেকে কোনও দান সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করে, চাষি নিজেই তাকে একটা নাম দিতে চায়। কারণ, যে তার অন্তরের সম্পদে ঋদ্ধ, শুধুমাত্র সেই পারে কিছু দিতে।

থিওডোর স্টর্মের লেখা একটি জার্মান শিশুগল্পের অনুবাদ ‘হাবুলের ভ্রমণবৃত্তান্ত’ পাঠ করেন নন্দিনী সেনগুপ্ত। বেশি বেশি ঘুরে বেড়াতে গিয়ে হাবুলের ভারি বিপদ হয়েছিল, কাজেই অতিরিক্ত কোন কিছুই যে ভালো নয়, এই গল্প সেরকম এক নীতিশিক্ষার কথা বলে। এছাড়াও দেখানেপনা করতে গিয়েই হাবুল নিজের বিপদ ডেকে এনেছিল, অতএব দেখানেপনার বিরুদ্ধেও একটা বার্তা আছে এই গল্পে।

মিষ্টিমুখ এবং খোলা আকাশের নিচে আড্ডা-গানে শেষ হল গল্পবৈঠক। অনতিদূরেই গঙ্গার বহমানতার সঙ্গে গল্পের প্রবাহ নিয়ে ঘরে ফিরলাম আমরা । এবারের আসরের পরম প্রাপ্তি ছিল কণা বসু মিশ্রের উপস্থিতি, যিনি অন্তরঙ্গ ভঙ্গীতে তাঁর লেখক জীবনের নানা অভিজ্ঞতা ভাগ করে, আলো করে রেখেছিলেন গবৈ। নিঃশর্ত বন্ধুত্বে জড়িয়ে থাকা গল্পবৈঠকের মানুষেরা সূর্যের অস্তরাগে মিশিয়ে মেখে নিয়েছিল এক আনন্দের গুলাল। গবৈ এগিয়ে চলুক এভাবেই বন্ধুদের গল্পহাত জড়িয়ে। 



প্রতিবেদন লিখলেন নন্দিনী সেনগুপ্ত