সেদিন হঠাত মনে পড়ে গেল আমাদের পুরোণো বাড়ির দালানে বসে একজোট হয়ে তুতো ভাই বোনেদের সঙ্গে জমিয়ে কাঁকড়ার ঝাল দিয়ে ভাত খাওয়ার কথা। কাঁকড়ার সুস্বাদু দাঁড়া চিবোতে চিবোতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যেত। হাতের এঁটো হাতেই শুকিয়ে যেত তবু যেন আড্ডা ফুরতো না। কিসের এত আড্ডাই বা ছিল? কেন ই বা এত গল্প জমে থাকতো জানিনা বাপু। একটা কারণ অবিশ্যি নিয়মিত দেখা না হওয়া। সকলেই ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় থাকতাম। কোনো এক ছুটির দিনে একজোট হয়ে খাওয়াদাওয়া, হৈ হুল্লোড়ে মেতে উঠতাম সকলে মিলে। মাংসের হাড় নিয়েও কাঁকড়ার মত অবস্থা হত আমাদের। আর খাওয়ার পর হাত চাটা যেন শেষ ই হত না। চাটনীতে আঙুল ডুবিয়েই চলেছি আর গল্পের গোরু গাছে উঠে আমাদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে। তখন কি আর জানি বাপু যে এই আড্ডা গিয়ে থমকে যাবে একদিন? এই গোলগল্প গুলো আছাড় খাবে ফেসবুকের চৌকাঠে? তাহলে আরেকটু নাহয় আড্ডা দেওয়া যেত। ঠিক তেমনি মনে পড়ে কলেজ কেটে কফিহাউসের আড্ডার কথা। কবিতায় কথালাপ, হেঁয়ালির ছটা, মজার জোকস বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে নেবার আনন্দ। এই বাস্তব আড্ডার ঠেক এখন সোশ্যালনেটের এক চিলতে নীল অলিন্দ। আর সেখানে নিজের চেনা পরিচিত তুতো ভাইবোনরা যেমন আছে, আছে স্কুল কলেজের বন্ধুরা আর আছেন অপরিচিত কিছু বন্ধুবান্ধব ও। তবে তথাকথিত আড্ডার বাতাবরণ কি মেলে এই ডিজিটাল গল্পের আড্ডাখানায়? সেখানে কি সম্পর্কের বেড়াজাল পেরিয়ে আলাপচারিতা ধাক্কা খায়? না কি সম্পর্কের টানাপোড়েন কে উপেক্ষা করে নিমেষেই উবে যায় কর্পূরের মত। অথচ ফেসবুকের মত প্ল্যাটফর্মে কোটি কোটি মানুষ অহোরাত্র আড্ডা দিয়েই চলেছেন।
তাহলে কি দাঁড়াল?
হাতের মুঠোয় স্মার্টফোন অথবা ল্যাপটপে কিম্বা ট্যাবের চ্যাটালাপই টিঁকে থাকবে? আর মুখোমুখি বসে বাস্তব আড্ডাগুলো হারিয়ে যাবে সুপর্ণকান্তি ঘোষের সেই অমোঘ লিরিক্সের মধ্যে দিয়েই? "কফিহাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই " বলে আমরা স্কাইপে, হোয়াটস্যাপে, ফেসবুকে চেঁচাতেই থাকব?
এ বারান্দা থেকে ও বারান্দায় কাপড় তুলতে তুলতে কিম্বা শীতের রোদে বড়ি দিতে দিতে, অথবা ছাদে চুল শুকোতে গিয়ে কেউ কারোর মুখও দেখব না আর জিগেসও করব না? কেমন আছো গো? আজ কি রান্না হল তোমার হেঁশেলে? অথবা চলো না ঐ সিনেমার টিকিটটা কাটি।
রোয়াকের আড্ডাও অপ্রতুল এখন। নেই সে রোয়াক ওলা বাড়ি, নেই সেই আড্ডাবাজ তরুণ তুর্কীরা। তা অবিশ্যি ভালোই একদিক থেকে। তরুণেরা কাজে ডুবে থাকাটা দেশের পক্ষে মঙ্গলজনক। আর যে তরুণরা এখনো বেকার হয়ে ফ্যা ফ্যা করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে জটলা করে তারা কি বোঝে সোশ্যালনেটের মাহাত্ম্য? অগত্যা রাস্তাই ভরসা তাদের আড্ডা দেবার জন্য। কিন্তু সেটাও তো ঠিক নয়। নব্য প্রযুক্তির কাছে আবালবৃদ্ধবণিতা যখন হার মানেনি তারাই বা কেন স্মার্টফোন খুলে ফেসবুকে বন্ধুর মুখ দেখবে না? সেটা বরং ক্ষতিকর সমাজের পক্ষে।
কি মনে করছে লোকজন? ব্যাঙের ছাতার মত কফির ক্যাফে হয়েছে আজকাল। তবুও সেখানে গিয়ে বন্ধুরা জমায়েত হয়ে নিজের নিজের স্মার্ট ফোন খুলে ফেসবুক খুলে বসে আছে। অথবা হোয়াটস্যাপে আলাপ চালিয়েই যাচ্ছে। কফির পেয়ালা পানতা হয়ে যাচ্ছে। বেয়ারা বিল মিটিয়ে চলে যাচ্ছে কিন্তু প্রকৃত আড্ডা যেন মুখ লুকোচ্ছে সেখানেও ।
সেই নিয়েই পক্ষে ও বিপক্ষে অলোচনা হোক! জমে উঠুক শারদীয়া চক্র বৈঠক ! কমেন্ট বক্সে লেখা পোস্ট করুন!
তাহলে কি দাঁড়াল?
হাতের মুঠোয় স্মার্টফোন অথবা ল্যাপটপে কিম্বা ট্যাবের চ্যাটালাপই টিঁকে থাকবে? আর মুখোমুখি বসে বাস্তব আড্ডাগুলো হারিয়ে যাবে সুপর্ণকান্তি ঘোষের সেই অমোঘ লিরিক্সের মধ্যে দিয়েই? "কফিহাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই, আজ আর নেই " বলে আমরা স্কাইপে, হোয়াটস্যাপে, ফেসবুকে চেঁচাতেই থাকব?
এ বারান্দা থেকে ও বারান্দায় কাপড় তুলতে তুলতে কিম্বা শীতের রোদে বড়ি দিতে দিতে, অথবা ছাদে চুল শুকোতে গিয়ে কেউ কারোর মুখও দেখব না আর জিগেসও করব না? কেমন আছো গো? আজ কি রান্না হল তোমার হেঁশেলে? অথবা চলো না ঐ সিনেমার টিকিটটা কাটি।
রোয়াকের আড্ডাও অপ্রতুল এখন। নেই সে রোয়াক ওলা বাড়ি, নেই সেই আড্ডাবাজ তরুণ তুর্কীরা। তা অবিশ্যি ভালোই একদিক থেকে। তরুণেরা কাজে ডুবে থাকাটা দেশের পক্ষে মঙ্গলজনক। আর যে তরুণরা এখনো বেকার হয়ে ফ্যা ফ্যা করে রাস্তায় দাঁড়িয়ে জটলা করে তারা কি বোঝে সোশ্যালনেটের মাহাত্ম্য? অগত্যা রাস্তাই ভরসা তাদের আড্ডা দেবার জন্য। কিন্তু সেটাও তো ঠিক নয়। নব্য প্রযুক্তির কাছে আবালবৃদ্ধবণিতা যখন হার মানেনি তারাই বা কেন স্মার্টফোন খুলে ফেসবুকে বন্ধুর মুখ দেখবে না? সেটা বরং ক্ষতিকর সমাজের পক্ষে।
কি মনে করছে লোকজন? ব্যাঙের ছাতার মত কফির ক্যাফে হয়েছে আজকাল। তবুও সেখানে গিয়ে বন্ধুরা জমায়েত হয়ে নিজের নিজের স্মার্ট ফোন খুলে ফেসবুক খুলে বসে আছে। অথবা হোয়াটস্যাপে আলাপ চালিয়েই যাচ্ছে। কফির পেয়ালা পানতা হয়ে যাচ্ছে। বেয়ারা বিল মিটিয়ে চলে যাচ্ছে কিন্তু প্রকৃত আড্ডা যেন মুখ লুকোচ্ছে সেখানেও ।
সেই নিয়েই পক্ষে ও বিপক্ষে অলোচনা হোক! জমে উঠুক শারদীয়া চক্র বৈঠক ! কমেন্ট বক্সে লেখা পোস্ট করুন!
আজও মনে পড়ে ছোটবেলার সেই সব আনন্দের দিনগুলো । দিদিমা চলে গেলেন । মামার বাড়ির সেই রম্য পরিবেশে যখন মা মাসি ও মামারা শোকাকুল , তখন আমরা সব কটা পাহাড়ের গায়ে বয়ে চলা ঝিরঝিরে নদীতে পা ডুবিয়ে আড্ডা দিচ্ছি । কি মজা । কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ত বাঁধনছাড়া আড্ডা । সে আড্ডা এখনও বয়ে চলেছে । আমি সৌভাগ্যবতী । ভার্চুয়াল আড্ডা তার সঙ্গে যুক্ত হয়ে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে সেই ছাত্রবেলা । কখনও সখিসনে নিবিড় গভীর বার্তালাপ , কখনও ইন্টেলেকচুয়াল বন্ধুদের দ্বারা সমৃদ্ধ হওয়া । নানান তর্কাতর্কি , কথা কাটাকুটি , হাস্যরসের মধ্যে শক্তচোয়াল বক্তব্য , সব মিলিয়ে দারুণ আড্ডা । শত ভাগ উপভোগ্য । মানুষ নিজের মনের কাছাকাছি মানুষকে ঠিক খুঁজে নেয় । উপরি পাওনা হলো , রিয়েল লাইফের মত দূরত্ব অতিক্রম করে , কাজকর্ম সামলেসুমলে আড্ডায় বসতে হয়না । ক্যাফের আকাশছোঁয়া বিল মেটাতে হয়না । এখন ত আর একটাকে তিনটে করে দেওয়া কালীদার চায়ের দোকান নেই ! ভার্চুয়াল আড্ডা তাই যুগ যুগ জিও !
উত্তরমুছুনAmi kintu khunje firi sei chotobelar sei din gulo .bikele dalaner kalo chouki r opar thakuma r tar charpashe asamobaysi jethima kakima pisi r dal .sabai mile tas khela cholche sange cone shaped thongay dalmuth nay chola vaja.nijeder colleger adda r dingulo to swapner mato.galpo kara r type kore galpo lekha ki ek.jakhani purono diner abesh fire pete chai phone i kore ni chottobela r bandhuder.expression jodi dekhtei na pelam.gala r swar i jodi na kane elo tahole kiser adda.Hi hi korte korte garagari diye tabei seta adda virtual adda to nei mama r cheye kana mama i valo
উত্তরমুছুনআড্ডার নস্টালজিয়াকে ইন্দিরা একেবারে ঠিকঠাক পাকড়ে ফেলেছেন।কিন্তু তাকে আর ফেরত পাই কই? কোন দিন কর্মহীন পূর্ণ অবকাশ --- আবার কি ফিরে আসবে? সেই নেই বলেই ত, কেবলই ভার্চুয়াল। তবু ত একটু ছুঁয়ে থাকা, ফিরে দেখা, দুটো মনের কথা বলা। নইলে একলা দৌড়ে চলতে চলতে দম বন্ধ হয়ে যেত। পুরোপুরি দুধের স্বাদ ঘোলে মেটেনা, তাই মুখোমুখি বসার ডাক থাকে, কিন্তু সময় অপ্রতুল যখন, ভাই ভার্চুয়াল, হাত ছেড়ো না।
উত্তরমুছুনকমেন্টের নীচে নিজের নাম অতি অবশ্যই দেবেন।
উত্তরমুছুনরিয়েল আড্ডা দিতে ই পছন্দ করি। ডিজিটাল নয়। আমার হিউম্যান টাচ পছন্দ , টাচ প্যাড নয়। প্রত্যেকের হাসিমুখ দেখতে চাই, স্মাইলি নয়, বন্ধুদের যন্ত্রণা ছুঁয়ে দেখতে চাই, দরকারে জড়িয়ে ধরতে চাই, ইমোটিকন তা পারেনা। আড্ডা ওয়েবে হয়? যার সঙ্গে ওয়েভ মেলে, মনের তরঙ্গের তালে তালে হয় ।
উত্তরমুছুনরিয়েল চাই। আসল সোনা ছাইড়া কে চায় নকল সোনা?
আড্ডা শুনলেই প্রিয় মুখ সমমনা মুখ মনে পড়ে। আড্ডা মানেই যে খুব হুল্লোড় সেটা আমার কোনোদিনই পছন্দ ছিলনা। আজও নেই।
উত্তরমুছুনআমি বরাবর একটু "চুজি" তাই স্কুল বা কলেজ জীবনেও খুব একটা আড্ডা দিইনি। আমাদের পরিবার আত্মীয় স্বজন যেহেতু বিদেশে বেশির ভাগ ফলে তুতো ভাইবোনদের সঙ্গ ও কম পেয়েছি। তবে গল্প শোনার লোভ বরাবর। আমার মা ছিলেন তুমুল আড্ডাবাজ। মায়ের বন্ধুনীরা প্রায় আসত ; তাদের বয়সের কোনো সীমা ছিলনা, ফলে সেই আড্ডাগুলোতে আমি বেশ মধ্যমনি হয়ে বসে উপভোগ করতাম। আর এ বিষয়ে বলা ভাল, সমবয়সীদের সঙ্গে আড্ডা দিতে আমার ভাল লাগতোনা অল্প বয়সে। সমবয়সীদের ইমম্যাচিওর্ড মনে হত।
ফলে আড্ডাবাজ আমি তেমন কোনোদিনই না।আর ভার্চুয়াল আড্ডা বা ডিজিটাল আড্ডা তো নৈব নৈব !
আমার আড্ডার কনসেপ্ট হলো সমমনা একজন মানুষ হলেও চলবে, যার সঙ্গে আড্ডা দেবার সময় ভাবতে হবেনা কী বলা উচিৎ আর কতটা গোপন রাখব, তার সঙ্গে রাজনীতি থেকে সিনেমা খেলা সাহিত্য গান এমনকি হাল্কা রসিকতা সমস্তই যেন চলতে পারে অনর্গল, সেই আড্ডা যেন মনকে আরাম দেয়, তৃপ্তি দেয়, সেই আড্ডা রাত গড়িয়ে যাবে....
সেই আড্ডা বহুদিনের পুষ্টিকর খাদ্য হয়ে মন ভাল রাখবে।
ডিজিটাল আড্ডা কখনওই নয়। বিছানায়,ছাদে মাদুর পেতে বসে নানাবিধ খাদ্য বস্তু চা পান সহযোগে যে আড্ডা সেই আড্ডাই পছন্দ।
কাবেরী রায়চৌধুরী ( সাহিত্যিক)
রিয়েল আর ভার্চুয়াল আড্ডা। এ যেন আটি চুষে আম খাওয়া আর টেট্রা প্যাক থেকে গ্লাসে ঢেলে ঢকধক করে ম্যাংগো জুস খাওয়া অথবা কড়াইয়ে দু মিনিট সেদ্ধ করে ম্যাগি খাওয়া আর পেপার কাপে গরম জল ঢেলে ম্যাগি কাপাম্যানিয়া খাওয়া। দুটোর কি আর স্বাদ এক হয়? ক্ষমা করবেন, খাওয়ার প্রসঙ্গ না টেনে আমি থাকতে পারি না, লোভী মানুষ তো।
উত্তরমুছুনআচ্ছা, আড্ডা মানে কি শুধুইই কিছু কথা বা ভাবনার আদান প্রদান? তাহলে মুড়ি মিছড়ি একদরের মত রিয়েল আর ভার্চুয়াল আড্ডাও এক। তবে আমার মনে হয় আড্ডা মানে শুধু কতগুলো শব্দ বা অনুভূতি নয়, পরিবেশ ও বটে। একা একা ঘরে বা অফিসে বসে ল্যাপটপে বা স্মার্টফোনে
খুটুর খুটুর করে কথা বলা বা স্কাইপ বা ভিডিও চ্যাট ও যদি হয়, সেটাকে কি আর আড্ডা বলে? ওটাকে বড়জোর ওই ইংরিজি 'চ্যাট' ই বলা চলে।
আড্ডা মানে ঠ্যাং ছড়িয়ে, আরাম করে, বন্ধু বান্ধব, ভাই বোনের ঘাড়ে মাথায় হেলান দিয়ে আর অবশ্যই চা, কফি বা উত্তেজক পানীয়র সাথে মুখরোচক খাবার দাবার সহযোগে মনের প্রাণের কথা উগরে দেওয়া। কথা বলতে বলতে হাসাহাসি, ঠেসাঠেসি, অল্প মারপিট, চুলটানা এগুলোও তো আড্ডারই অঙ্গ। কলেজের ক্যান্টিনের বেঞ্চ বা টেবিল, বন্ধুর বা নিজের ঘরের বিছানা বালিশ এসব ছাড়া কি আড্ডা ভাবা যায়? স্কাইপ বা অনলাইন চ্যাটে সে সুখ কোথায়?
ফোন বা ল্যাপটপের স্ক্রিনে প্রিয় মানুষের হাসি বা কান্না দেখা যায় বটে, কিন্তু তাকে কি ছোঁয়া যায়? শত ইচ্ছা হলেও তার চোখের জল মোছা যায় না, জড়িয়ে ধরে আদর করে চুমু খাওয়া যায় না, বুকে জড়িয়ে বলা যায় না "ওরে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা তো আছি"।
অফিসে ল্যাপটপে কাজ করে চলেছি আর এদিকে পাশে আরেকটা উইন্ডো তে চ্যাট বক্স খোলা অথবা স্মার্ট ফোনের হোয়াটস্যাপ আর মেসেন্জারের ইনবক্সে টুংটাং এসে চলেছে মেসেজ , এসব এখনকার খুব পরিচিত ছবি। কষ্ট করে ফোনটাও করতে হয়না আর. কিছু বলবার দরকার হলো তো মেসেজ পাঠিয়ে রেখে দাও বন্ধু দেখে নেবে তার সময়মতন বা প্রত্যুত্তর দেবে নিজস্ব ভঙ্গিতে। বছর পাঁচেক আগেও অনেকের কাছে এমন স্বপ্ন ছিল অধরা। এখন স্মার্টফোনের দৌলতে বন্ধুর আর আমাদের ড্রইংরুমের দূরত্ব বলে কিছু নেই, সে প্রাণের বন্ধুটি যতই থাকুননা কেন সাত সমুদ্দুর আর তেরো নদীর পারে। প্রতিমুহূর্তের এক্সপ্রেশন্স নিমেষে পৌঁছে যাচ্ছে কেবল একটি ফিঙ্গারট্যাপের বিনিময়ে। হচ্ছে লাইভ চ্যাট, গ্রুপ চ্যাট আরো কত কি! বন্ধুতালিকায় বন্ধু ছাড়াও রয়েছেন আত্মীয়-স্বজন সহকর্মী সহযোদ্ধা ছাড়াও আরো অনেকেই যাদের হয়তো আমরা কখনো সামনাসামনি দেখিনি। সারা সপ্তাহ কাজ- কাজ -কাজের তাগিদে ইঁদুরদৌড় আর সপ্তাহান্তে বিশ্রাম আর সেইসঙ্গে ঘরের চেহারার সংস্কার এই এখন আম-জনতার জীবনপাঁচালি । তার ফাঁকেফোকরেই সারাদিন চলতে থাকে এইসব ভার্চুয়াল আড্ডা। মাউথফ্রেশেনার এর মতন যা মাইন্ডফ্রেশেনিংএর কাজ করে। কখনো বা কারুর সাথে কোনো গ্রুপে মতে মিললনা , কুছ পরোয়া নেহি, দাও ব্লকিয়ে। কখনো বা কারুর দুঃখের সমব্যথী হতে পাঠিয়ে দাও একটা হার্ট বা অশ্রুসজল ইমোজি। কাজ শেষ। হয়তো দু;খ হচ্ছেনা মোটেই, কিন্তু বন্ধু তো আর জানতে পারবেনা মনে কি আছে ! উৎসবান্তে পৌঁছে দাও হাঁড়িভর্তি রসগোল্লার ছবি আর শুভেচ্ছা। কোনো আড্ডা না হলেও সকালে বিকেলে পাঠিয়ে দাও একটা আধটা শুভেচ্ছাসহ পিকচার পোস্টকার্ড ব্যাস! সম্পর্ক থাকবে বহাল।
উত্তরমুছুনকিন্তু যাই বলোনা বাপু, আমি রিয়েল আড্ডাকেই ফুল মার্ক্স্ দেবো আজ এই প্রবল ভার্চুয়াল আড্ডাবাজির দিনেও। কারণ একটাই, স্নেহের আর ভালোবাসার রিয়েল পরশ । রিয়েল আড্ডার মাঝে হাজার ভুল বোঝাবুঝিকেও কেবল একবার আলতো করে পিঠে হাত ছোঁয়ালেই আজ-ও নিমেষে মিটিয়ে ফেলা যায় যে! রিয়েল আড্ডার ভ্যালু যদি নি:শেষ হয়ে যেতো তাহলে আজ-ও ভার্চুয়াল বন্ধুরা একটা জি.টি র জন্যে অমন মুখিয়ে থাকতেননা নিশ্চয়ই। আসলে একদম সামনাসামনি মানুষের চরিত্রটা যতটা বেশি ভালোভাবে স্টাডি করা যায় ভার্চুয়াল লেভেলে তা সম্পূর্ণ সম্ভব নয়। ভার্চুয়াল লেভেলের অনেক মানুষ-ই আমার অভিজ্ঞতায় তাদের রিয়েল লাইফের থেকে অনেকটাই আলাদা। ভার্চুয়াল লেভেলের আলোচনায় গুগল থেকে অনেক তথ্যের কপি-পেষ্ট করে ভাষণ দেওয়া যায়, রিয়েল আড্ডায় প্রকৃত বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা না থাকলে আড্ডায় অংশ নেওয়া যায়না তাই অনেক জ্ঞানী খোলসধারীর আবার রিয়েল আড্ডা বিলকুল না-পসন্দ! মানুষের ব্যস্ততা বেড়েছে, জীবনযুদ্ধ বেড়েছে, আড্ডার সময় কমেছে, সকলের একসাথে সময় বের করা কঠিন হয়ে পড়েছে, টিভি-র সোপ-অপেরার দৌলতে বাড়িতে বাড়িতে মানুষের যাওয়া আসা কমেছে - এসব-ই যেমন সত্যি সেইসঙ্গে এটাও সত্যি যে রিয়েল আড্ডা কোনোদিন ই লুপ্ত হবেনা, ছিল-আছে এবং স্ব-মহিমায় থাকবে।
অনন্যা চট্টোপাধ্যায়।
তুলনাই চলে না ...সেই কিশোরীবেলার ফিসফিস গল্প, এ ওর গায়ে ঢলে পড়ছে রিনরিনে হাসি,আর একটু বড়ো হয়ে যখন মেয়েবেলা পার হচ্ছি, ছাতের কোনায় নিষেধ পেরিয়ে রঙবোলানো গল্প আমাদের..চলতে চলতে কখন আলগোছে সন্ধে নামতো। বাড়ির পাশে মাঠের মধ্যে বিকেল নামলে দাঁড়িয়াবাঁধা খেলা শেষে গোল হয়ে ফ্রকের সারি ...।তখন আমরা ক্লাস ইলেভেন, তখন আমরা ষোলো , বেলা মিনু চৈতিদের সঙ্গে তিনতলার সিঁড়ির ধাপে বসে গল্পকথায় সময় ভুলতাম।নরম চাঁদের আলোয় ভিজতাম কতোদিন সবাই মিলে ছাতের আলসেতে.. তারপর কলেজজীবন। ক্লাসের পর হেদুয়ায় জলের ধারে সবুজ বেঞ্চে পা ঝুলিয়ে বসা, মিত্রা সিনেমা, বসন্ত কেবিন,বিডন স্ট্রীট, কলেজ স্ট্রীটের ফুটপাথ আর কফিহাউস জুড়ে আমাদের হাসি গল্প আড্ডা চলত রোদ বিছোনো দুপুরে..দুপুর থেকে সন্ধে।
উত্তরমুছুনহোস্টেলের লনে দুটো বিশাল কৃষ্ণচূড়া গাছ ছিল, বিকেল হলে তার তলায় বসে আমরা বাড়ির গল্প , ছোটবেলার গল্প, স্কুলের গল্প, পাড়ার গল্প, খুনশুটির গল্প ,সেখান থেকে রাজেশ খান্না অমিতাভ বচ্চন, সেখান থেকে প্রেমের গল্প , হবু না দেখা বরের গল্প কী না হতো.. হাসতে হাসতে ভাসতে ভাসতে দিনের শুরু দিনের শেষ... সেকাল আমাদের বুকের ভিতর , আমাদের স্বপ্নের ভিতর, আমাদের অনুভবের ভিতর,আমাদের মুঠোর ভিতর .. বোঝানো বড়ো কঠিন।একালে যন্ত্রআড্ডায় গল্প হয় গল্পের জন্য। যেন প্রাণহীন কিছু সময় আঙুলের ডগায় ধরা।সেই প্রাণের হাসি , সেই মনের কথা,সেই চোখের চাওয়া, সেই বন্ধু হওয়া.. বড্ডো ভালো সেইসব স্বপ্নে মোড়া কাল।সেইসব সুখ সুখ দিন।
কস্তুরী চট্টোপাধ্যায় (কবি ও বাচিক শিল্পী )
আড্ডা আড্ডাই । সে রিয়েল হোক, বা ডিজিটাল । আড্ডাপ্রেমী মানুষ একটা জাযগা খুঁজেই নেয় ।
উত্তরমুছুনতবে ডিজিটাল আড্ডার জন্যে কিছু দক্ষতা,কিছু স্কিল লাগে যেগুলো রিয়েল আড্ডায় দরকার পড়ে না । স্কিল বলতে আমি কম্পিউটার-জ্ঞান বা মোবাইল-হ্যাণ্ডলিং স্কিলের কথা বলছি না । সাধারণ আড্ডা, ভিডিও-চ্যাট বা স্কাইপ বা ভিডিও-কনফারেন্স জাতীয় আড্ডা বাদ দিয়ে যে ডিজিটাল আড্ডা, সেটি মূলত লিখে হয় । সেই আড্ডায় কিন্তু একটা লেখার ক্ষমতা বা দক্ষতা লাগে । অনেক মানুষই আছেন যাঁরা রিয়েল আড্ডায় নিজের কথা চমত্কার প্রকাশ করতে পারেন, কিন্তু লেখার স্কিল নেই বলে ডিজিটাল আড্ডায় তেমন গুরুত্ব পান না ।
আবার অনেকেই বাংলা না লিখে বাংলিশ বা রোমান হরফে যে বাংলাটা লেখেন, তার পাঠোদ্ধার করতে বেগ পেতে হয়। এই উদ্ভট ভাষা আড্ডার মেজাজের পরিপন্থী।
রিয়েল আড্ডার অনুষঙ্গ হিসেবে মুড়ি-ফুলুরি বা ঝাল ঝাল আচারের তেলমাখা মুড়ি আর কাপের পর কাপ চায়ের কথা বাদই দিলাম । কিন্তু আরো একটা ব্যাপার আছে । রিয়েল আড্ডায় আড্ডাধারীরা সবাই যে বক্তা,তা কিন্তু নয় । অনেকেই নীরব থাকেন,কিন্তু তাঁদের উপস্থিতিটাই দারুণ এক্সপ্রেসিভ । একটা কথা বলার পর বাকিদের যে ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন বা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ,তা আড্ডাকে অনেকটা উজ্জীবিত করে । এগুলো আড্ডার অনুষঙ্গ ।
ধরো কেউ বললেন,‘জানো,আসার সময় রাস্তায় কি দেখলাম?’
অমনি জোড়া জোড়া উত্সুগক বা নিরুত্সুক চোখ বক্তার দিকে । কারো মুখে সোজা হাসি,কারো মুখে বাঁকা হাসি । কেউ আগ্রহী,কারো শরীরী ভাষায় স্পষ্ট অবজ্ঞা । আড্ডায় বড্ড প্রাণ । ডিজিটাল আড্ডায় প্রাণের ছোঁয়া কম । স্মাইলি বা ইমোটিকন দিয়ে কি সে অনুভুতি হয়?
রাস্তার ধারে চায়ের দোকানে আড্ডা, কিংবা মাঠের মধ্যে গাছের ছায়ায় গোল হয়ে বসে আড্ডা, কফিহাউসে কাফে-কফিতে বসে আড্ডা, কলেজ-ক্যান্টিন অফিস-ক্যান্টিনে আড্ডা, ক্লাবে রেস্তঁরায় বসে আড্ডা কিংবা কারো বাড়ির বৈঠকখানা কি ডাইনিং টেবিলে আড্ডা... সব জায়গাতেই একটা এনভয়ারনমেন্টাল এফেক্ট থাকে । পরিবেশটাই আড্ডার সহায়ক । ডিজিটাল আড্ডায় সেই আবহ থাকে না ।
তবে আড্ডা আড্ডাই । কর্মব্যস্ত অনুশাসিত জীবনে একটুকরো মুক্তি । নানা কারণে পরিস্থিতির চাপে কিংবা সময়াভাবে রিয়েল আড্ডায় হয়ত বসা হচ্ছে না । তখন দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর জন্যে ডিজিটাল আড্ডা একটা উত্কৃষ্ট উপায়, এ কথা মানতেই হচ্ছে । বিশেষত অন্তর্মুখী বহু মানুষ যাঁরা অন্যের মুখোমুখি বসে নিজের কথা বলায় সঙ্কুচিত থাকেন, তাঁদের জন্যে ডিজিটাল আড্ডা মনের মধ্যে একটা জানলা খুলে দেয় বৈকি ।
তবু আমার মনে হয়, নাটক আর শ্রুতিনাটকের মধ্যে যে পার্থক্য, রিয়েল আড্ডা আর ডিজিটাল আড্ডার তফাতটাও সেইরকম ।
-- আইভি চট্টোপাধ্যায় (সাহিত্যিক)
একে মায় রান্ধে না তায় তপ্ত আর পান্তা!
উত্তরমুছুনজয়া চৌধুরী
মুখোমুখি না ডিজিটাল আড্ডা – বিতর্কের এই বিষয় দেখে প্রথমেই মনে হল একথা। কারণ আড্ডা অনেকাংশেই বিস্মৃত আজকাল। গোল হয়ে বসে অনেকেই একসাথে অনেক বিষয়ে কিচিরমিচির করাকে যদি আড্ডা বলা যায় তাহলে সেটা বেশি দেখি বিভিন্ন রেস্তোরাঁয়। আজকাল খাবারকে উপলক্ষ্য করেই তরুণ প্রজন্মের মানুষ রেস্তোরাঁয় একত্র হয়। আড্ডার আ টি যদি ‘আবেগ’ হয় তাহলে সেটা যে ইদানীং মৌজ মস্তি আর ফুর্তি-র সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত হয়ে গেছে অনেকটাই এ বিষয়ে খুব দ্বিমত আছে কি? এখানে আমি শিল্পটিল্প যারা চর্চা করে তাদের বাদ দিচ্ছি। কারণ সেটা চিরকাল সমাজের শূন্য দশমিক শূন্য শূন্য শূন্য শতাংশের মানুষই করে আসতেন, করেন এবং করবেনও। কিন্তু সাধারণ মানুষ যারা রাজনীতি থেকে বাজার দর থেকে খেলা এইসব বিষয় নিয়ে আড্ডা মারতেন চায়ের দোকানে, রকে, কলেজ ক্যান্টিনে বা যেখানে সেখানে তারা খুব বেশি রকমের ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন এখন। উদয়াস্ত শুধু এক টার্গেট থেকে আর এক টার্গেটে ছোটাছুটি এইই তাদের রোজকার জীবনের রুটিন। তাছাড়া মানুষের অসহিষ্ণুতাও দারুণ বেড়ে গেছে। আড্ডা মানে প্রতীপ ও বিপ্রতীপের মত বিনিময়। এখন কোন মজলিশে সংখ্যাগুরুর মতের বিরুদ্ধে কিছু কথা বলুন অমনি শুরু হয়ে যাবে তর্ক নয় ঝগড়া তারপর সেখান থেকে হাতাহাতি ও আরো ভয়ানক কিছু। মানুষে মানুষে সহ্য বিশ্বাস ধৈর্য ইত্যাদি কমে যাবার প্রভাব আড্ডাতেও পড়েছে। তার ওপর ডিজিটাল আড্ডার তো কথাই নেই। সেখানে ভিন্ন মত মানেই আস্তিন থেকে বেরিয়ে আসবে বিষাক্ত ছোবল বা কথায় কথায় ট্রোল করা। ভাবের বিনিময় তখনই সম্ভব যখন আপনি তা নিতে প্রস্তুত থাকবেন। তাই অনেক পুরোন ভাল অভ্যাসের মত আড্ডাও খুব কমে গেছে। তবুও কি মানুষ মনের কথা বলতে আঁকুপাঁকু করে না? করে তো। ওই ব্যক্তিগত পরিসরে বা তাও না করে বুঁদ হয়ে যায় হোয়াটসঅ্যাপে ফেসবুকের পোষ্টে কিংবা টিভি সিরিয়ালে।
চারপাশে জনবিস্ফোরণের মাঝেও এখন বেচারা মানুষ একলা একলা কথা বলে... নিজের সাথে।
জয়া চৌধুরী
বৈঠকখানা থেকে চণ্ডীমণ্ডপ, পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকান থেকে কলেজ ক্যান্টিন, রান্নাঘরের উনুনের আশপাশ থেকে খাবার টেবিল, এমনকী দরজার সামনেটা, বারান্দার ধাপিটা, ছাতের সিঁড়িটাও ছিল মানুষের মুখে মুখে আশ্চর্য সব ছবি আর গল্পের গজিয়ে ওঠার জায়গা। গল্প গজাত মুখে মুখে এবং একাধিক মানুষের সংযোগ স্থলে। সেই সব গল্পের অনেকটাই বলা হত বড় বড় চোখ করে, হাত পা নেড়ে এবং ঠোঁট জিভের অদ্ভুত সব ঘর্ষণে। গল্প বলা, গুল দেওয়া, আড্ডায় রাজা উজির মারার এক একটা রকম থাকত এক এক জনের। আর অনেক লোকের মধ্যে এক এক জন হত সে আড্ডার মধ্যমণি। বাংলা সাহিত্যের অনেকটাই আবার এই সব বৈঠকি আড্ডার বিবরণের মতো, আর তাই উপভোগ্য।
উত্তরমুছুনএই গল্প বলা আর গল্প শোনার ট্র্যাডিশন কিন্তু কেবল আমাদের জীবনের বাইরের দিকে ছিল না। জন্মের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে যেত শোনার মধ্য দিয়ে বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন। ছোটবেলা সম্বন্ধে যা যা মনে করতে পারি, সে সব স্মরণের আদ্ধেক হল বড়দের মুখচ্ছবি আর সেই মুখনির্গত আওয়াজের স্মৃতি। তাঁরা গল্প বলছেন, সে সব গল্পের মধ্যে অডিয়ো-ভিশুয়াল, অর্থাৎ দৃশ্য শ্রাব্য দুটো বস্তুই খুব মনোরমভাবে পেশ হচ্ছে। অর্থাৎ শুধু শ্রবণ না, আমাদের চোখ এবং কখনও বা স্পর্শও সেখানে কাজ করেছে। মনের মধ্যে ছেপে বসে গেছে কাহিনি বা কথাগুলো ছবির মতো। পিসি, মামু, কাকু, মা বাবা, দিদা, ঠাকুদ্দা, সবাই খুব গল্প বলতেন।
এর উল্টোদিকে এখন সব গল্পই হয় ফেসবুকে, আর মেসেঞ্জারের ছোট্ট ইনবক্সে। এতে করে দ্রুততা আসছে। আমাদের জনে জনে যেতে হচ্ছে না আড্ডার অকুস্থলে। সিঙাড়া আর চা মিস হয়ে যাচ্ছে। আর যাই হোক, চা সিঙাড়া ত আর ভার্চুয়ালি খাওয়া যায়না।
একে বলে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটান।
বিদেশে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে কথা, একা একা কম্পিউটারের সামনে বসে না থেকে, মেশিন আনপ্লাগ করে বেরিয়ে যান নিজের ফ্ল্যাট থেকে, চলে যান পাশের অ্যাপার্টমেন্টে, বেল বাজান, গল্প জমান প্রতিবেশীর সঙ্গে।
আমাদের সমস্যা হল আমাদের প্রতিবেশিদের আত্মীয়দের এবং আরো অনেককেই আর পছন্দ হয়না সেভাবে। দূরের বন্ধুদেরই বেশি ভাল লাগে। এ দ্বিধা থেকে কবে বেরবো আমরা, কে জানে।
ঘরোয়া, পাড়ার আড্ডা ফিরুক, আবার ভার্চুয়াল আড্ডাও থাকুক না।
রিয়েল রিয়েল রিয়েল। আড্ডা দেব বন্ধুর চোখে তাকাবো না তাকি হয়? বন্ধু হোক শত্রু হোক আড্ডা রিয়েল হওয়া চাই। সমস্বরে হাসবো চা খাবো হাঁটবো বা নিদেন পক্ষে বন্ধুর সাথে না হয় একটু বাক বিতন্ডাই করবো তবে যা করবো রিয়েল। ডিজিটাল বন্ধুত্ব দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো ছাড়া কিছু নয়। সময় সুযোগের অভাবে এভাবেই কিছুটা সময় কাটানো আরকী । ডিজিটাল আড্ডায় সবকিছুই বড় সাজানোগোছানো । এলোমেলো কথা কে হৃদয়ের থেকে মস্তিস্ক সাজিয়ে পরিবেশন করে বেশি। তাতে সত্য থাকতেও পারে নাও থাকতে পারে। বন্ধু খুঁজতে গেলে ঠকার একটা সম্ভাবনা থাকেই। এখনও যখন রিয়েল আড্ডার কখনও সময় পাই জীবনকে একটু যাচিয়ে নিতে পারি যে এখনও বেঁচে আছি ডিজিটাল হয়নি।
উত্তরমুছুনতখন সবে কয়েকদিন হোল কলকাতায় এসেছি। কয়েকটা বছর গুজরাট, মহারাষ্ট্র, এবং ভারতের বাইরে থাকতে হয়েছিল কর্তার লেজ ধরে, আমার অবস্থা ঠিক বিনা জলের মাছের মত। অবশ্যই কইমাছ, নইলে এতগুলো বছর নিজের জায়গা ছেড়ে থাকা যেত না! কতকিছু যে মিস করতাম তার ইয়ত্তা নেই, সবচেয়ে বেশি দুঃখু হত আড্ডা এবং বাংলা ভাষার জন্য।
উত্তরমুছুনএকটা সিনেমা দেখতে গিয়েছি, রাহুল বোস ও রাধিকা আপ্তের। আরে, ফিরে এসেই পুরোনো সবকিছুতেই ঝাঁপিয়ে পড়েছি হাভাতের মত এমনসময় এইসব কি ব্যবস্থা? মনের কথা বলতে চ্যাট? ওরে বাবা, সেদিন বড্ড বিশ্রী লাগলেও দেখছি এখন এটাই রেওয়াজ হয়েছে ছোটো থেকে বুড়ো সকলেরই। কারও কাছেই এখন সময় নেই কথা বলার! আড্ডা তো দূর অস্ত! আমরা যারা ছটপটিয়ে মরছি, তারা মরি-ই! নো অন্য উপায়! কারণ কারো মোখোমুখি বসে আড্ডা দেওয়ার সময়ই নেই।
আন্তর্জালের সুব্যবস্থায় পুরো পৃথিবী এখন অন্যভাবে ব্যস্ত। সম্পর্কের মধ্যে, সমস্ত কাজের মধ্যে, এমনকি জীবনের এ টু জেড সমস্ত প্রয়োজনে সর্বক্ষণ দিব্যি বিশ্বস্ত বন্ধুর মত হাত ধরে রয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি। ইচ্ছে করলেই মুহূর্তে পৃথিবীর এইপ্রান্ত থেকে ওই প্রান্তের সঙ্গে কথা কিম্বা মুখোমুখিও হওয়া যায় যদিও তা ডিজিট্যালি, তা হলেও এইভাবে সম্ভব হচ্ছে মনের ইচ্ছে পুরণের। তাহলে আর অন্যভাবে কে বসবে পুরোনো দিনের মত আড্ডায়!
আজকাল বেশিরভাগ মানুষ বড্ড একা থাকতে বাধ্য হয় নানান কারণে। সেকারণেই ডিজিট্যাল নির্ভর হতেই হয় কিন্তু অবস্থা এমন বিপর্যয়ের পর্যায়ে পৌঁছেছে যাতে আমি আপনি সকলেই বড় ভুক্তভোগী। তার কুফলে সকলেই কষ্ট পাই। স্বামীস্ত্রী দুজনে মুখোমুখি থাকলেও দুজনেই মুখে কুলুপ এঁটে একান্ত নিজস্ব কথাগুলো বলতে হলেও মেসেজের মাধ্যমে বলছেন! ছেলেমেয়ের সঙ্গে মাবাবার কথা বলাও এইভাবেই চলছে এবং যে কোনো সম্পর্কের মধ্যে মনে হচ্ছে এটাই স্বাভাবিক অবস্থা।
আজকেই টিভি চ্যানেল সার্ফ করতে করতে ডিডি বাংলাতে শান্তিনিকেতন থেকে সম্প্রসারিত নাচের একটি অনুষ্ঠানে আটকে গেলাম, মুগ্ধ হয়ে দেখছি, খুব সুন্দর। মাঝে মাঝে দর্শকের দিকে ক্যামেরা যাচ্ছে, অবাক! হতভম্ব না হয়ে পারলাম না! দেখলাম, সেখানে আশি শতাংশ দর্শক (সব বয়সী) কানে ফোন নয়ত ফোনের পর্দায় চোখ রেখে অতি ব্যস্ত! মঞ্চে তখন দীর্ঘ পরিশ্রমের পর অপূর্বসুন্দর নৃত্য পরিবেশন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা।
আমরা আন্তর্জালে এতটাই বিপজ্জনকভাবে জড়িয়ে পড়ছি ক্রমাগত। এই সেদিনেও যেভাবে আড্ডার জন্য প্রাণ আকুল হয়ে উঠত, আড্ডায় বসলে হয়ত পৃথিবীর সবকিছুকেই ভুলে যেতে মুহূর্ত লাগত না সেই সব কথাই হয়ত ইতিহাস হয়ে যাবে।
তবে আশাবাদী আমি চিরকাল, চিরশাশ্বত ভাবনায় স্বপ্ন দেখি। হবে, হবে, আড্ডা। সেই নির্ভেজাল শৈশব, কৌশোর, তারুন্যের, যৌবনের সোনার দিনের সুসময় ধরে রাখবে আমাদের আকুলতা। জীবনের মাঝপথে এসে আড্ডাকে হারিয়ে যেতে দেব না কিছুতেই! ধরে রাখব আমরা নিশ্চয়ই। তবে, ওই সংবাদ মাধ্যমের ফ্যাশনেবল আড্ডা আড্ডা অভিনয়, দেখনদারী নয়। সত্যিকারে যারা সমমনস্ক আড্ডাপ্রিয় মানুষ, হবই একজোট। জমে উঠবে পৃথিবী ভুলে যাওয়া, খাওয়ার পাতে এঁটো হাত শুকিয়ে ফেলা, কিম্বা আচমকা বন্ধুদের সঙ্গে ফুটপাথে, পথচলতি লোকজনের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে হাহা হিহি। আর একটু খুনসুটি, একটু মজা এবং তারপর..! অনেকখানি নিজের মনকে বন্ধুদের আঁচলে ফেলে রেখে আবার শিগ্গিরি একদিন আড্ডার অঙ্গীকার করে নেহাৎ বাড়ি ফিরতে হয় তাই অটোতে কিম্বা বাসে...।
না! দয়া করে বড়মানুষদের সপ্তাহান্তে গেটটুগেদারের সঙ্গে মেলাবেন না! কিম্বা অত্যাধুনিক ড্রয়িংরুমের সান্ধ্যপানীয়ের ঝিমধরা নেশায় পেশাগতভাবে ল্যাং মারার অভিপ্রায়ে মিলিত হয়ে অভিনয়ের পাল্লা দেওয়ার প্রসঙ্গ বলছি না এখানে। ক্ষমা করবেন, এখানে কেবল আমি ও আমার মত অতি সাধারণ মানুষদের কথা বলতে চেয়েছি। সবশেষে বলি, আড্ডা জিন্দাবাদ। সহজ সুন্দরমন ও ভাবনায় আড্ডাবাজরা চিরজাগ্রত আছে, যুগে যুগে তারা চিরশ্বাশত থাকবেই।
পূর্ণপ্রভা ঘোষ
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনআড্ডা শব্দটার মধ্যেই একটা আনন্দ আছে. সেটা রিয়েল হোক কি ডিজিটাল. আসলে আমাদের স্বভাবই হলো 'আহা কিসব দিন ছিল' বলে হাপিত্যেশ করা. কিন্তু এটাও ভাবতে হবে তো, সেই কিসব দিনের কিসব মানুষেরা আজ কিসব জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে. চাইলেও তাদের একজায়গায় করে, মাদুরটি পেতে পাদুটো ছড়িয়ে বসে আড্ডা দেওয়া এখন দূর অস্ত. তাই ডিজিটাল আড্ডায় মুখটি না দেখতে পাই, সুখ-দু:খের গল্পটুকু হয়েই যায় মাঝে মাঝে. মশারির মধ্যে যখন বাকিরা ঘুমন্ত, তখন একপাশ ফিরে মুঠোফোনের আলোটুকুতে ফিরে পাওয়া স্কুল, কলেজ জীবনের মাঠে বসে দেওয়া আড্ডার রেশ. আহা এরও মজা আছে বিস্তর. কোনো কথায় জোরে হাসি পেলো, কি একটু আওয়াজ দেওয়ার ইচ্ছা হলো, ভয়েস রেকর্ডারটা অন করে পাঠিয়ে দাও. অন্যপ্রান্তে সকলে তা শুনে হেসে গড়াগড়ি.
উত্তরমুছুনহ্যা তবে রিয়েল একখানা আড্ডা আজ যখন জমাতে পারি, মানে সকলকে এক করতে পারি, তখন তা এক উপরি পাওনা হয় বইকি. সামনে বসে বলা, শোনার মজাই আলাদা. কেউ অন্যমনস্ক হয়ে গেলে চট করে তাকে ফিরিয়ে আনা, কথার মাঝে দু'কলি গান, কবিতা অথবা ফেলে আসা শৈশবের কথা বলতে বলতে চোখের কোণে একচিলতে জল. মোট কথা হলো সেই আড্ডার ইচ্ছেটাকে বাঁচিয়ে রাখা যখন যেমন করে হোক. দুরত্ব যেন বাধা না হয় আর আনন্দে যেন ভাঁটা না পড়ে.
ami to real addar yuger manush ....shei school amal theke Julie cinemar darun sob bold scene niye jana ojanar jogot niye ki na adda merechhi ...teacher elei chup. tarpor jadavpur er adda jeno onno ek jogot. bishal mathe shondher por adda boshto. chhele meye kono vedaved kono dini chhilo na. Guiter e bajto bideshi sur ar amra gane gane pagol hotam ...pagol hotam intellectual adday. adda gele bangalir ar thaklo ki ! kintu shei adda chhilo amader chena gondir modhye. Virtual adda shei chena gondike diyechhe bhenge. desh shohor kono kichhur gonditei ta bandha noy. Ei to virtual addar kalyan e ami Americay kotha boli amar koto college jiboner bondhu ar ex coleague der shonge. amar ekhankar anushthan er chhobi ora dekhte pay anayashe ! Gota jagat ta jeno muthor modhye. Tai amar mote gachhero khao tolaro kurao. amra ekta generation jara dutoi dekhechhi..dutor mojai nite pari. Tai pujor dinguloy luchi mangsho diye lunch shere bichhanay jomiye bondhubandhaber shonge addao choluk ...abar messenger e virtual bondhu jodi new york er pujor khatiyan pathay tao dekha choluk...badha kisher?
উত্তরমুছুনTapasri Pal
যারা কমেন্ট বক্সে লিখছেন দয়া করে বাংলা ফন্টে টাইপ করে দিন আর দু একটি শব্দে নিজের পরিচয় লিখে দিন।
উত্তরমুছুনআমি তো সেই রিয়েল আড্ডার যুগের মানুষ। সেই স্কুল আমল থেকে জুলি সিনেমার দারুন সব বোল্ড সিন নিয়ে ,জানা অজানার জগৎ নিয়ে কি না আড্ডা মেরেছি। ..টিচার এলেই চুপ। তারপর যাদবপুর উনিভার্সিটির আড্ডা আবার এক অন্য জগৎ ! বিশাল মাঠে আড্ডা বসতো সন্ধ্যার পর। ছেলে মেয়ে ভেদাভেদ কোনোদিনই ছিল না। গিটারে বাজতো বিদেশী সুর আর আমরা গানে গানে পাগল হতাম। কিংবা পাগল হতাম ইন্টেলেকচুয়াল আড্ডায়। আড্ডা গেলে বাঙালির আর রইলো কি?. কিন্তু সেই আড্ডা ছিল আমাদের চেনা গন্ডির মধ্যে। ভার্চুয়াল আড্ডা সেই চেনা গণ্ডিকে দিয়েছে ভেঙে ! দেশ , শহর কোনো কিছুর গণ্ডিতেই তা বাঁধা নয়। এই তো ভার্চুয়াল আড্ডার কল্যাণ এ আমি আমেরিকায় কথা বলি কত কলেজ জীবনের বন্ধুদের আর এক্স কলিগদের সাথে। আমার এখানকার অনুষ্ঠানের ছবি তারা দেখতে পায় অনায়াসে। গোটা জগৎটাই হাতের মুঠোর মধ্যে। তাই আমার মতে গাছেরো খাও তলারও কুড়াও। আমরা একটা জেনারেশন যারা দুটোই দেখেছি, দুটোর মজাই নিতে পারি। তাই পুজোর দিনগুলোয় লুচি মাংস দিয়ে লাঞ্চ সেরে বিছানায় জমিয়ে বসে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডাও চলুক . আবার মেসেঞ্জার এ ভার্চুয়াল বন্ধু যদি নিউ ইয়র্ক এর পুজোর খতিয়ান পাঠায় তাও দেখা চলুক ! বাধা কিসের !
উত্তরমুছুন- তপশ্রী পাল: সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, বিশেষ উৎসাহ : লেখালিখি ও গান। চলো যাই ও বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ভ্রমণ ও অন্য লেখা প্রকাশিত হয়েছে।
আড্ডার কোনও ডিজিটাল অস্তিত্ব হতে পারে,কী জানি,আমার মন কেন যেন কিছুতেই সায় দেয় না এতে।ডিজিটাল আকারে অনেককিছু হতে পারে,আলোচনা,ডিসকোর্স,খুব কঠিন-কঠিন বিষয়ের ওপর কঠিনতর আলোকপাত।অনেকে মিলে অনেকরকমের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা,ডিজিট্যালি,সব চলতে পারে!কিন্তু আড্ডা? নৈব নৈব চ!
উত্তরমুছুনআড্ডা বসবে চন্ডিমন্ডপে।আড্ডা বসবে ম্যাডক্স স্কোয়্যারে,পার্কসার্কাসে দুর্গাপুজোভরা আলোর কয়েকটা দিন!ঘামের গন্ধ ঘুরবে।পারফিউমের ঘ্রাণ মন জুড়োবে।মানুষে মানুষে সেতু গড়ে উঠবে।ডিজিট্যালি তো মুখ থাকে না,থাকে মুখের সাজেশন।
হ্যাঁ,যা বলছিলাম,আড্ডা বসবে কফিশপে।কখনও কোনও বাড়ির পেন্টহাউসে।কখনও নিতান্ত আটপৌরে,রাস্তার রকে। চা-সিঙারা,মুড়ি-তেলেভাজা,বা পিৎজা-পেস্ট্রিতে,মাঝরাতের বাতি পুড়িয়ে উত্তেজনার পারদ চড়বে।যা গড়াবে হাতাহাতি অথবা স্ফূর্তিময় আবহে।নাহ্! ডিজিট্যাল আলাপে কই সেই শরীরী আবহ!আছে শুধু শীতল,হয়তো মেধাবি,হয়তো সাদামাটা শব্দবুনন!
এ তো গেল আড্ডার বহিরঙ্গ।আর অন্তরে ডুব দি' যদি,দেখি,হাত-পা-ধড়-মাথাকাটা পরিবার,পাড়া ও সমাজ।ডিজিট্যালি বোতাম টিপে টিপে গল্প করি।ভালোবাসি।তারপর,শাটার নামিয়ে,একদম একা,আমাকে আমার মতো বাঁচতে শেখাই।
সবাই মিলে বসে একে অন্যকে ছুঁতে পারলে,সহমত হতে হতে,বিরোধিতা করতে করতে চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় তুললে,তবে না জমে উঠবে আড্ডা!
চৈতালী চট্টোপাধ্যায়
বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক
রিয়েল ভার্সেস ডিজিটাল আড্ডা” অর্থাৎ কিনা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানো।শারীরিক উপস্থিতি,একে অপরের মুখ দেখতে পাওয়া,চোখে চোখে চাওয়া,বডি ল্যাঙ্গোয়েজ পড়তে পারার সুবিধে,পঞ্চইন্দ্রিয়ের স্পর্শসুখ অনুভব করা – এ সবই ডিজিটাল আড্ডায় অনুপস্থিত।ছোটবেলা থেকেই আড্ডায় আমার ভূমিকা থাকত নির্ভেজাল শ্রোতা হিসেবে।আমার পাঁচ মাসি দুই মামা।তাঁদের ডালপালাসমেত কোন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে যখন একজোট হয়ে আড্ডা চলত আর হাসির ফোয়ারা ছুটত তখন সারা পাড়া টের পেতেন।সেই আড্ডার রেশও থাকত বহুদিন ধরে,মনপ্রাণ সতেজ হয়ে উঠত।তারপর ছিল স্কুল কলেজের বন্ধুদের আড্ডা যার সঙ্গে অন্য কোন পারিবারিক আড্ডার তুলনাই হয় না কারণ এই আড্ডার বিষয়বস্তুই থাকত প্রেম।আমার স্কুল ও কলেজ দুটোই ছিল ওনলি ফর গার্লস।অবসর পিরিয়ড এবং কোন টিচার যদি না আসতেন সেইসময়গুলো দরজা বন্ধ করে চলত তুমুল আড্ডা।সেই আড্ডায় কত যে গুল মেশানো থাকত সহজ সরল মানুষ আমি বুঝতেই পারতাম না,নিজেও বানিয়ে কথা বলতে পারতাম না তাই যথারীতি এখানেও আমার শ্রোতার ভূমিকাই বেশী থাকত।থাকত টিচারদের মিমিক্রি করা।দেখেশুনে হাসতে হাসতে ঢলে পড়তাম বন্ধুদের গায়ে।থাকত একে অপরের পেছনে লাগা।আর একটা জিনিস খুব হত,গল্পের বই নিয়ে আলোচনা।কাজেই রিয়েল আড্ডার পরিপূরক ডিজিটাল আড্ডা কোনদিনই হতে পারবে না।তবে সবকিছুরই একটা না একটা ভাল দিকও অবশ্যই থাকে।ডিজিটাল আড্ডার পরিসর অনেক বেশী বলে আমরা বহুমানুষের মতামত জানতে পারি এবং যেহেতু লেখাই একমাত্র মাধ্যম তাই দেখা গেছে অনেকেই পরে ভাল লিখিয়ে হয়ে উঠেছেন।~শাশ্বতী সরকার
উত্তরমুছুনগৃহবধূ এবং কবি
আমি ভাই একটু কুড়ে মানুষ। বাস-ট্রাম ঠেলে নিয়মিত আড্ডা দেওয়া আমার ধম্মে নেই। কী করবো? তাই এই ডিজিটাল আড্ডা কেই রক বানিয়ে ফেলেছি। এখানেই প্রতিদিন সকাল-বিকেল রক পালিশ করি। বেশ কেটে যায়। ট্রাম-বাস ঠেঙিয়ে কোথাও যেতে হয় না। নিজেই এক কাপ চা বানিয়ে আড্ডা মারি দেদার। এইখানে, এই ডিজিটাল এর দোরে। ভাবছেন তো বেরসিক। তা ভাবুন। কে কী ভাবলেন আমার খুব একটা যায় আসে না। বাড়িতে বসে থাকার আরাম ই আলাদা। আরাম হারাম বলছেন? বলুন। আমার কাঁচকলা। ওই মুখোমুখি বসা, আড্ডাধারী দের উত্তাপ, মুক ফস্কে কী বেরিয়ে গেল সেই নিয়ে রাগ-অভিমান-হতাশা, সব নিয়ে আবার ট্রাম-বাস-অটো ধরে ফেরা। দূর! দূর! ডিজিটাল দীর্ঘজীবী হোক।
উত্তরমুছুনমানুষ আর মানুষ কে ছোঁয় না। শুধু নিরন্তর দীর্ঘশ্বাস ছুঁয়ে ছুঁয়ে বাঁচা। আমি নেই। এখানে সব দীর্ঘশ্বাস ডিলিট করা যায়। সব বেদনা এডিট করা যায়। আর কী চাই। প্রতিদিন ডুবতে থাকা মানুষের।
বুবুন চট্টোপাধ্যায়।
কবি, প্রাবন্ধিক।