মঙ্গলবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৮

গল্প বৈঠক - ১৯ বিষয়ঃ স্বরচিত অ্যাডাল্ট থিমের গল্প

ণিশতম গল্পবৈঠকের প্রাপ্তবয়স্ক এবং প্রাপ্তমনস্ক অধিবেশন বসেছিল দক্ষিণ কলকাতার রাজডাঙায় শ্রীমতী তপশ্রী পালের বাড়িতে। এবারের বৈঠক আদ্যন্ত নারীপ্রধান এবং লেখিকাদের উপস্থিতিতে উজ্জ্বল। সাহিত্যিক কণা বসুমিশ্র প্রায় প্রতিবারের মতই এবারেও উপস্থিত ছিলেন।
মোট আটজন গল্পকার এবারে গল্প বলেছেন। আলোচনায় ছিলেন অদ্বিতীয়া পত্রিকার প্রাক্তন সম্পাদক মৌমিতা তারণ এবং সিস্টার নিবেদিতা গার্লস কলেজের বাংলার বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপিকা মণিদীপা দাস। সঞ্চালনায় মৌমিতা ঘোষ কথার ফাঁকে ফাঁকে দু এক লাইন স্বরচিত কবিতায় ভরিয়ে দেন গল্পপাঠের সন্ধ্যা।


প্রথম গল্পকার ছিলেন বুবুন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর গল্পের নাম ছিন্নশোক। গল্পের বিষয় এক মধ্যবয়সী যৌবন অতিক্রান্ত দম্পতি। প্রকৃতির নিয়মে স্ত্রী তাঁর মেনোপজ আক্রান্ত দেহে অনুভব করেননা মিলন সুখ। স্বামীও এন্ড্রোপজকেই ভবিতব্য জেনেছেন। আপাত সুখী দাম্পত্যে অবিশ্বাস নেমে আসে স্বামীর মৃত্যুতে। স্ত্রী জানতে পারেন, যৌবন তাঁরই গিয়েছে। স্বামী তাঁর অজান্তে পরকীয়াতে রত ছিলেন। স্ত্রীর এই শোক স্বামীর মৃত্যুশোককে ছাপিয়ে যায়।


দ্বিতীয় গল্পকার আইভি চট্টোপাধ্যায়। গল্পের নাম নিকুঞ্জ। ভারী মরমী গল্প। এটিও এক দম্পতির গল্প। যেখানে স্বামী আবিষ্কার করে যে স্ত্রী আসলে সমকামী। অথচ, যে কোনও কারণেই হোক, সেইটি সে নিজেও বোঝেনি। জানার পর প্রাথমিক দুঃখবোধ দুজনকেই ভারাক্রান্ত করে । কিন্তু স্বামীর কাছে প্রেম এক অন্য রূপে আসে। স্ত্রীর অসময়ে সে পাশে থেকে যায়।
তৃতীয় গল্পকার তপশ্রী পাল। তাঁর গল্পটির নাম প্রথম রিপু। আদ্যন্ত কমেডির মোড়কে এটিও এক দম্পতির মধ্যবয়সের সেক্সুয়াল ইনকমপ্যাটিবিলিটির গল্প। শেষ পর্যন্ত যা শেষ হয় পুরুষটির অনিবার্য এক মোহ ও পাপের মধ্য দিয়ে। বাস্তব ঘটনা গল্প হয়ে উঠেছে। 
 চতুর্থ গল্পকার ভাস্বতী বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর গল্পের নাম সাপ। এটিও এক দম্পতির গল্প। শীতল স্ত্রীকে সন্দেহ করে  স্বামী। সেই সন্দেহের প্রতীক যেন সাপ। সাপের হিসহিস শব্দ যেন তার নিজের বুকের ভেতর। শেষ পর্যন্ত গল্পের উত্তরন ঘটে। স্বামী যখন পিতা হয়ে ঘুমন্ত স্ত্রীর অবয়বে নিজের আত্মজাকে  দেখতে পায়।
পঞ্চম  গল্পকার অনিন্দিতা মণ্ডল। গল্পের নাম উন্মেষ। গল্পটি একটি মুক্ত  সম্পর্কের গল্প। যেখানে দুটি ভাই সম্পূর্ণ বিপরীত স্বভাবের। উদ্দাম পৌরুষ যার, সেই ভাইকে প্রত্যাখ্যান করে নরম স্বভাবের অন্য ভাইকে আপন করে নেয় এক নারী। অবাক নারীর বিস্ময়কে সত্যি প্রতিপন্ন করে যে পুরুষ বলে, সে জীবনে প্রথম যে মেয়েটিকে দেখেছে, সে তার মা।
ষষ্ঠ গল্পটির নাম ও সাপ। গল্পকার মহুয়া মল্লিক। বলিষ্ঠ এক গল্পে গল্পকার জানিয়েছেন ব্যাভিচারিনী এক নারীর যৌন অতৃপ্তি ও তৃপ্তির সন্ধিক্ষণ। এখানে সাপ যৌন কামনার অনুষঙ্গে উঠে এসেছে।
সপ্তম গল্প নিমমঞ্জরী। গল্পকার কৃষ্ণা রায় সমাজের চিরাচরিত এক কষ্টের কথা বলেছেন। যেখানে ধর্ষিতা তার জনককেই চিহ্নিত করে ধর্ষক হিসেবে। আর তার এই কষ্ট থেকে বার করে আনার জন্য তার স্বামী মনোবিদের পরামর্শ মানে। মেয়েটি তার জীবনের অন্য প্রধান পুরুষটির হাত ধরে বেরিয়ে আসতে থাকে আলোয়। ধর্ষিতার একটি পাপবোধ কাজ করে। যা থেকে মুক্ত হতে পারলে সে আসলে পেরিয়ে যায় অন্ধকার।


অষ্টম গল্পটি গল্প বৈঠকের মূল হোতা, ইন্দিরা  মুখোপাধ্যায়ের। গল্পের নাম তিন কন্যা। তিনটি দুঃখিনী মেয়ের গল্প। তিন বোন। বাবা মা যখন দালালের সঙ্গে মিলে তাদের বিক্রি করে দেয়। আর তাদের নিষ্ঠুর পরিণতি যা হতে পারে তাই। একটি বোন বেশ্যা পল্লী থেকে পালিয়ে যেতে গিয়ে হারিয়ে যায়।শহরের "মিসিং গার্লের দলে নাম লেখায়। একটি ঠাই পায় নিষিদ্ধ পতিতা পল্লীতে। সয়ে  যায় তার। আর সবচেয়ে বড় বোন খাল পাড়ের বস্তিতে থাকে। দিন গুজরান করে কয়েক বাড়ি পরিচারিকার কাজ করে। শেষ পর্যন্ত সেও ভেঙে পড়ে প্রৌঢ় মালিকের কাছে। রাত্রিতে তাকেও খুশি করতে হয় ধাবার ড্রাইভার খালাসিদের। নইলে বস্তিতে থাকা চলেনা। নিরুপায় সে আশ্রয় চায় সামাজিক ভাবে নিরুপায় এই মানুষটির।
গল্প বৈঠকের এই অধিবেশন আক্ষরিক অর্থেই প্রাপ্তমনস্ক। মনস্তত্ব জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে প্রতিটি গল্পে।
আগামীতে আরও উন্নত হোক ধারালো হোক বৈঠকি কলম।উঠে আসুক নতুন নতুন গল্প। 


প্রতিবেদনঃ অনিন্দিতা মণ্ডল

1 টি মন্তব্য:

  1. খুব আনন্দে কেটেছে গল্পবৈঠকের এক বিকেল । স্বরচিত গল্প পাঠের অভিজ্ঞতা এই প্রথম । বেশ নার্ভাস ছিলাম । কিন্তু ইন্দিরা, মহুয়া, অনিন্দিতার সঙ্গে নতুন বন্ধু সবাই ভালবেসে জড়িয়ে নিলেন। অসাধারণ কিছু গল্প শোনার অভিজ্ঞতাও হল । এমন সাধু সংসর্গ পেয়ে লেখার তাগিদও আসছে ভেতর থেকে । ইন্দিরা এবং গল্প বৈঠকের সবাইকে অনেক অনেক ভালোবাসা ।

    উত্তরমুছুন