শুক্রবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২০

শীতকালীন পিকনিকে গল্পবৈঠক ৩৬

গল্পমেলা, সারাবেলা 


গত ২১শে ডিসেম্বর, ২০১৯ দক্ষিণ কলকাতার রবীন্দ্র সরোবর সংলগ্ন লেকফ্রেন্ডস ক্লাবের লনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এক অভিনব গল্পপাঠের আসর। আয়োজক ছিল দাঁড়াবার জায়গা প্রকাশনা সংস্থা। বাংলাসাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক হয়ে এমন গল্পমেলা খাস কলকাতার বুকে বুঝি বড় একটা হতে দেখা যায়না। শীতের সোনাগলা রোদ্দুরে বনভোজনের ফাঁকে লেখকরা তাঁদের উত্কৃষ্ট স্বরচিত গল্প পাঠ করলেন সেদিন।
রাজ্য জুড়ে যেসব গল্প সংগঠনগুলি নিয়মিত গল্পচর্চার মধ্যে থাকেন তাঁরা ছিলেন এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত। এদের মধ্যে হাজির ছিল গল্পবৈঠকের এক ঝাঁক গল্পকারেরা। অবগুন্ঠন সাহিত্য পত্রের অনুগল্পকারেরা। চূঁচুড়া গল্পসল্পের আটচালার বেশ কয়েকজন গল্পকার । এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কাঁচড়াপাড়ার শ্রমণা পত্রিকার তরফ থেকে চন্দ্রাণী বসু এবং সাইন্যাপস পত্রিকার মৌসুমী ঘোষ।  এদিন গল্পের অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক প্রচেত গুপ্ত, ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায় এবং চুমকি চট্টোপাধ্যায়। শ্রোতা অতিথি ছিলেন সানন্দা, উনিশ কুড়ি পত্রিকার সম্পাদক পায়েল সেনগুপ্ত। সুদীপ চক্রবর্তীর প্রাককথন দিয়ে শুরু হল সেদিনের গল্পবেলা। এরপরেই অন্যতম সঙ্গীতশিল্পী পরমা দাশগুপ্তর রবীন্দ্রসংগীত দিয়ে সূচনালগ্ন আরো মধুর হয়ে উঠল। সকালবেলার গল্প সঞ্চালক ছিলেন সৌভিক গুহসরকার। প্রধান অতিথিদের বরণ করার পরে শুরু হল গল্পপাঠ। গল্পবৈঠকের ন'জন তাদের গল্পপাঠ করলেন একে একে। এদের মধ্যে ছিলেন সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃষ্ণা বসাক, ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়, সংযুক্তা সেনগুপ্ত, রুমকি রায় দত্ত, ইন্দ্রনীল বকসি, নন্দিনী সেনগুপ্ত, তপশ্রী পাল এবং সুপ্তশ্রী সোম। গল্পসল্পের আটচালার বিমল গঙ্গোপাধ্যায়, অরিন্দম গোস্বামী, সুব্রত বসু, সিক্তা গোস্বামী এবং কাকলি দেবনাথ খুব সুন্দর গল্প পড়লেন।
মৌসুমি ঘোষের "আয়না" এবং  চন্দ্রাণী বসুর  "ক্লোরোগ্লোবিন" নামের দুটি গল্পও ছিল অসাধারণ । অমিতাভ দাস অণুগল্প নিয়ে অনেক কাজ করে চলেছেন। তাঁর অবগুন্ঠন সাহিত্যপত্রের তিনি ছাড়াও ঐদিন যুগান্তর মিত্র, প্রিয়াঞ্জলি দেবনাথ, মানসী গাঙ্গুলী, গল্প পড়লেন। সেদিনের অন্যতম প্রাপ্তি ছিল  গল্পকার প্রচেত গুপ্ত, ত্রিদিব কুমার চট্টোপাধ্যায় এবং চুমকি চট্টোপাধ্যায়ের কন্ঠে তাঁদের স্বরচিত গল্পপাঠ শোনা। অপূর্ব এক গল্পের আবহ তৈরী করে দিলেন তাঁরা। সঙ্গে চলতে লাগল ধূমায়িত কফি সহযোগে বিস্কিট পর্ব। বেলা বাড়তেই শ্রোতা এবং গল্পের কুশীলবদের সামনে পরিবেশিত হল সুখাদ্য। গরমাগরম খিচুড়ির সঙ্গে বেগুণী, ডিমের কষা, আলুর দম এবং গুড়ের রসোগোল্লা ছিল সেদিনের মেন্যু। গল্পসভার অধ্যক্ষ শ্যামলী আচার্য সেই ফাঁকে আমন্ত্রণ জানালেন সঙ্গীত শিল্পী শ্রাবণী রায় কে । গল্পের খেয়া বয়ে চলল নিজের মত করে, শীতের দুপুরে। গল্পপাঠের দ্বিতীয় অধিবেশনে বিকেলবেলার সঞ্চালক ছিলেন উপাসনা সরকার। দাঁড়াবার জায়গা প্রকাশনার তরফ থেকে প্রত্যেক গল্পকারকে বরণ করে নেওয়া হল সুদৃশ্য বাহারী ফুলগাছ দিয়ে। সাহিত্যের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক নারায়ণ শূর, দেবকুমার চক্রবর্তী, পিনাকী চক্রবর্তী এবং সর্বোপরি কবি তন্ময় চক্রবর্তীর সহযোগিতা ছাড়া এমন গল্পের অনুষ্ঠান সম্ভবপর হতনা।
সেদিন উপস্থিত গল্পকারদের মধ্যে সর্বাণী বন্দ্যোপাধ্যায়ের "জননী", তৃষ্ণা বসাকের উকুন সিরিজের গল্প,  ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের "সঙ্গীত নন্দন", ইন্দ্রনীল বক্সীর "উইকেট কিপার", রুমকি রায় দত্ত'র "বেওয়ারিশ, সুপ্তশ্রী সোমের "শো-উইন্ডোর লালপরী, নীলপরী", তপশ্রী পালের "সান্টা", নন্দিনী সেনগুপ্ত'র "মা" অত্যন্ত প্রশংসিত হয়।  এছাড়া সুব্রত বসুর "জিপার", অমিতাভ দাসের "সবুজ রঙের পদ্ম" , অরিন্দম গোস্বামীর "কখনও হঠাত”,  বিমল গঙ্গোপাধ্যায়ের "আজ নয়" সিক্তা গোস্বামীর "মাতৃরূপেণ", প্রিয়াঞ্জলি দেবনাথের "আলোর দিকে" , মানসী গাঙ্গুলির "অন্য কুমোরটুলি”, যুগান্তর মিত্র'র "বেওয়ারিশ" ও ছিল এক সে বড় কর এক সব গল্প । ভালো একটা গল্পের দিনে এমনি প্রাপ্তি হল শ্রোতাদের। 
এভাবেই সাহিত্যের মুক্তাঙ্গনে বাংলা ছোটগল্পের জয়জয়াকার হোক। সাহিত্য নামের মহীরুহের অনেক শাখা প্রশাখা। প্রবন্ধ, উপন্যাস, কবিতা, ছড়া, ভ্রমণা কাহিনী, রম্যরচনা, অনুবাদ সাহিত্য এসবের মধ্যে সেই বৃক্ষের সবচেয়ে শক্তপোক্ত শাখাটি হল ছোটগল্প। সার্থক ছোটগল্প লেখা সবচেয়ে বুঝি কঠিন কাজ। সেটির উত্তরণ এমন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আরও আরও বিকশিত হোক। চারিদিকে এত এত অন্যান্য শীত মেলার রমরমিয়ে আয়োজনের পাশাপাশি নবীন এবং প্রবীণ গল্পকারদের মেল বন্ধনে গ্ল্পমেলাও চলতে থাক। ছড়িয়ে পড়ুক জেলায় জেলায়। এগিয়ে আসুন সম্পাদক, প্রকাশকেরা। তবেই না বাংলা সাহিত্যের প্রতি দু-তরফের সামান্যতম ঋণ শোধ হবে? গল্পকারদের স্থান দিন। বিজয়ী হোন তাঁরা ।
রবিঠাকুরের কথায় বলতে ইচ্ছে করল,

“ তব মন্দির অঙ্গন ভরি মিলিল সকল যাত্রী। স্থান দাও, স্থান দাও, দাও দাও দাও হে। "

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন