বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৬

বিজয়ার গল্পপাঠ


দুর্গাপুজোর পরেই গল্পপাঠ অনুষ্ঠান হল ভবানীপুরে কবি যশোধরা রায়চৌধুরীর বাড়ীতে। 
কেমন যেন ফিরে পাওয়া কলেজ-ইউনিভার্সিটির দিনগুলো। সেখানে পড়াশুনোর চাপমুক্ত মধ্যবয়সী আমরা মানে গল্পকার, কবি, ঔপন্যাসিক বন্ধুবান্ধবরা। উত্সবের শেষের মনখারাপের হাওয়া উড়িয়ে নিয়ে গেল এক নিমেষে ভবানীপুরে যশোধরার মা মানে শ্রদ্ধেয়া শ্রীমতী অরুন্ধতী রায়চৌধুরীর পুরণো বাড়িতে। বিকেলেই "মেঘ না চাইতে জল" সাপ্তাহিক বর্তমান পত্রিকার সম্পাদক, বলিষ্ঠ গল্পকার জয়ন্তদার ফোন। ফেসবুকে দেখে স্বতোপ্রণোদিত হয়ে আসতে চেয়েছিলেন যিনি শ্রোতা হয়ে। কি আনন্দ! সিঙ্গারার দোকানে লাইন। কারণ বিজয়া। গাড়ির জ্যাম কারণ কালীপুজোর প্যান্ডেল। যশোধরার ফোন" কোথায় তুমি?" বললাম, এই তো জয়া আর শর্মিষ্ঠা আমার সাথে, যাচ্ছি। শর্মিষ্ঠা বেচারী রায়গঞ্জ থেকে ছুটে এসেছে গল্পপাঠ করার জন্য। নিবেদিতার ফোন" ও ইন্দিরাদি, আমি এসে গেছি, তোমরা?" তারপরেই পৌঁছে গেলাম যথসময়ে। রজতশুভ্রদার সহধর্মিণীর নিপুণ হাতে বানানো গন্ধরাজ স্যান্ড‌উইচ....আহা কি খেলাম! গার্গী-বুবুন শ্রীহরির ল্যাংচা নিয়ে প্রবেশ।  ডাঃ সোনালী তার ব্যস্ত হাসপাতাল শেডিউল সামলে এক ব্যাগ নিষিদ্ধ ভাজাভুজি নিয়ে হাজির তখন। অরে চলে এসেছে তো সকলেই... খোলা চুলে শাশ্বতী সরকার....আমাদের চেয়ে একটু ছোট কিন্তু কবিতা লেখে বেশ। পূর্বা এল ব্যস্ত সমস্ত হয়ে...একটু কিন্তু কিন্তু কারণ একটু দেরী, আধটু টেনশন..কারণ সাজুগুজু, ডেবিট কার্ড বেত্তান্ত...ব্লা, ব্লা, ব্লা...তারপরেই ইচ্ছামতীর সম্পাদক মহাশ্বেতা...ওয়েব ডিজাইনিং যার নেশা ও পেশা.....মন্দ লেখেওনা সে। আর এলেন বলিষ্ঠ গল্পকার  তৃষ্ণা বসাক। সকলেরি হাতে একটা করে ঝোলা। বিজয়া বলে কতা! আর আমাদের হোষ্ট মানে যশোধরা শুধু এঘর আর ওঘর...লিকার চায়ের জল চাপায়...চা ফুরায়....আবার ধোঁয়া ওঠে...আবার চা....এবার থামবি তোরা? আমাকে ল্যাপটপ খুলে এবার গল্পটা পড়তে দিবি? সকলেই স্বরচিত অণুগল্প শুধু অনুবাদক জয়া স্প্যানিশ অনুবাদ...আহা বড়ো ভাল বিদেশী প্লট! নিবেদিতা তার নিজের গাঁমানে পুরুলিয়ার ডায়লেক্টে খাসা লেখে আর পড়েও দারুণ! আরে এতো এক সে বড় কর এক! আমরা বাপু মঞ্চ, হল, মিডিয়ার ক্যামেরায় বিশ্বাসী ন‌ই। আমাদের দেখনদারি বড্ড আটপৌরে। আমাদের গল্পের আড্ডাটাই প্রধান। আর লাইট-একশান-ক্যামেরার মেকি আভিজাত্য নাই বা থাকল গল্পবৈঠকে। প্রকৃত অর্থে সাহিত্য ঝড় তো উঠল কাল। চলতেই থাকবে সে ঝড়। কারণ আমাদের একটাই কমন কেমিষ্ট্রি আছে। তা হল "বাংলা ভাষা" । আমরা সাহিত্য করে এইটুকুই পাই। আমাদের আগের প্রজন্মের রথী মহারথী স্বনামধন্য লেখকরা এই পথ‌ই দেখিয়েছিলেন....সেসব এখন গল্প। এখন শুধু পিঠ চাপড়ানি, দেখনদারি আর হিংসাহিংসি। সেটুকু নেই মনে হয় এই নিখাদ গল্পবৈঠকে। আর ছিল গানও। শুনেছি গান আর খ্যাঁটন ছাড়া নাকি সাহিত্যবাসর সম্পূর্ণ হয়না। সুনীলদা, বুদ্ধদেব গুহ তাই বলতেন।



কালের কষ্টিপাথর পত্রিকার প্রতিবেদন 

একটু বেশী আনন্দ পান করলাম। বুকের ভেতরের আকাশ টা আরও বেশী নীল হয়ে গেল। মেঘ করেছিল খুব। ফুস করে উড়ে গেল।দশভুজা দিদি ডাক দিয়েছে “সেই কোন সকালে”। যেদিন থেকে ডাক সেদিন থেকে দিন গোনা।
কাল গল্পবৈঠকে গিয়েছিলাম। যারা খুব দামী ভাষা ব্যাবহার করেন তারা লিখবেন, ঋদ্ধ হলাম, সমৃদ্ধ হলাম। আমি খুব আনন্দ পেলাম।
রজত দার গল্প যারা শুনেছে তারা ফ্যান হয়ে যায়... আমি ১ নম্বরের। যেমন মজার তেমন উপস্থাপনা।
আমি পড়লাম আমার মুর্শিদাবাদের ভাষায় লেখা একটা শাস বহু কাহানি।
সোনালী দি চিকিৎসক মানুষ... কবিতা লেখেন আর বললেন ঘোর বাস্তব একটি গল্প।যেটা যে কোন মানুষের মনন কে একটু নাড়িয়ে দেবে।
শর্মিষ্ঠা বললেন অপূর্ব এক গল্প।সাথে গাইলেন “বিশ্ব সাথে যোগে যেথায় বিহার”।
জয়া স্প্যানিশ ভাষার একটি অনুবাদ গল্প পড়লেন...একটু গা শির শির করা। আর গাইলেন ঐ ভাষার একটি গান। বেশ শুনতে। (তবে ওর গলায় যে মালাটা ছিল সেটা নিয়ে আমি ওকে কিচ্ছু বলিনি । মা কালীর দিব্যি।)
বুবুন চট্টোপাধ্যায় । নামটায় যথেষ্ট।মা আর সন্তানের এক অদ্ভুত দোলাচলের গল্প ।আমাকে ভাবাল।
গার্গী রায়চৌধুরি । আধুনিক ধনী নাগরিক জীবন আর তার ভয় আর স্বপ্ন নিয়ে এক অসাধারন লেখা... মজার ...আবার ... ভাবনার।
শাশ্বতী আমার খুব চেনা কবি। একটা কবিতা ঘেঁষা গল্প বলল।সুন্দর।
পূর্বা দি... গল্পের আগেই গোটা ছয়েক মজার কথা, গল্প বলে দিয়েছে। কিন্তু যেটা বলল। মানে পড়ল সেটা থেকে নেমে এলো আধুনিক টিনএজ সমস্যার উদ্ভ্রান্ত অবস্থা। দারুন।
তৃষ্ণা বলেন একটি অদ্ভুত লেখা। আমি সব্বাই কে বলবো “কালের কষ্টি পাথর”নামের ম্যাগাজিন টি থেকে পড়তে। “উকুন” । ফাটাফাটি।
ইন্দিরা দি। যার লেখার অপেক্ষায় ছিলাম সেদিন। একটা অন্য রকম সৃষ্টি। গল্প নরম হয়ে কবিতা হয়ে গেল । নাকি কবিতা হঠাৎ গদ্য হয়ে গেল।শিখলাম।
মহাশ্বেতা আমার বন্ধু । ওর মতোই ওর ইছছামতি কে বড্ড ভালোবাসি। ও পড়ল ছোট্ট দুটো গল্প। ভারী মিষ্টি।
যশোধরা রায়চৌধুরী। উনি একহাতে চা করছেন। আমাদের গল্প শুনছেন। অসাধারন মনন।আর যশোধরা দিদির গল্প। উহ। তিন টে পরমাণু বোমা। এতো ভালো। আর বিষয় বৈচিত্র।
আমি কাঙালের মতো গিয়ে রাজার মতো ফিরলাম।
ধন্যবাদ দিলে বড্ড কম দেওয়া হবে। আমি সারা জীবনে এমন আনন্দ পাইনি।

নিবেদিতা ঘোষ মার্জিত 
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন