বুধবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০১৬

চৈত্রের গল্পপাঠ

চৈত্রের চোখরাঙানি উপেক্ষা করে গল্পবৈঠকের দ্বিতীয় উপস্থাপনা ছিল উত্তরপাড়ার জীবনস্মৃতি ডিজিটাল আর্কাইভের অনবদ্য গ্যালারীতে। নামীদামী দুষ্প্রাপ্য ছবির প্রদর্শণী চলছিল সেখানে । জীবনস্মৃতির কিউরেটর অরিন্দম সাহা সর্দারের আমন্ত্রণে কবিতায়, গানে ও গল্পপাঠে হাজির ছিলেন কয়েকজন। শুরুতে বক্তব্য রাখলেন দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়। বাংলা ব‌ইয়ের গাল্পের সাথে ইলাস্ট্রেশান এর ক্রম বিবর্তনের স্লাইড শো টি ছিল অনবদ্য। মধ্যিখানে ছিল গল্পবৈঠকের অনুষ্ঠান। আর সব শেষে বিরাট প্রাপ্তি ভালোপাহাড়ের স্রষ্টা কমল চক্রবর্তীর স্বতঃস্ফূর্ত বক্তব্য।



ফোকাস নিবেদিত জীবনস্মৃতির সব অনুষ্ঠানের মত‌ই গতকালকেও ছিল শিল্পীবরণ। হাতে লাল সূতোয় বাঁধা একগুচ্ছো দুব্বোঘাস, কপালে আবীরের ফোঁটা, হাতের তালুতে একমুঠো রক্তকরবী, আর সাথে ওরিগ্যামির লালপাখী। আর তারপরেই গ্যালারীর কোনো এক কোণা থেকে বেজে উঠল বিশেষ এক শব্দের অণুরণন। শুরু হল সঞ্চালক অয়নের কথা। বেশ প্রোফেশানাল ছোঁয়া আছে কথায়। অনুষ্ঠানের নাম "তুমি সন্ধ্যার মেঘমালা"। ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় আবৃত্তি করলেন রবিঠাকুরের এই গানটি। বর্ণালী কর ধরলেন "আজি এ আনন্দসন্ধ্যা" .. গমগম করে উঠল গ্যালারী। জীবনস্মৃতির সবুজ ও সজীব বাঁচানোর থিমটি আজকের যুগে প্রশংসার দাবী রাখে। আর গল্পবৈঠকের সেরা প্রাপ্তি তাদের কাছ থেকে পাওয়া এই ফলকটি। সবশেষে ভালোপাহাড়ের সজীব ও সবুজ বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া । ফোকাস নিবেদিত এবং জীবনস্মৃতি আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে গানের ফাঁকে ফাঁকে গল্প পাঠ ছিল বেশ অন্যরকম প্রাপ্তি। সেদিন উত্তরপাড়ার জীবনস্মৃতি সভাগৃহে গল্পবৈঠকের আসরে সবশেষে ভালোপাহাড়ের সজীব ও সবুজ বাস্তুতন্ত্রের মধ্যে আমরা সকলে হারিয়ে গেছিলাম কিছুক্ষণ । ভালোপাহাড়ের স্রষ্টা শ্রদ্ধেয় কমল চক্রবর্তীর স্বতঃস্ফূর্ত বক্তব্য শুনে আজো স্তম্ভিত হতে হয়।




উনি আরাধনা করেন এক নতুন ঈশ্বরকে যার নাম দিয়েছেন উনি "বৃক্ষনাথ"। উনি লুপ্তপ্রায় পাখীর প্রজাতি ও বৃক্ষের সংরক্ষণ করে চলেছেন প্রতিনিয়তঃ । আর ভালোপাহাড়ের আশেপাশের অনেক মানুষেরা স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসছেন ভালোপাহাড়ের মঙ্গলের জন্য। তাঁদের মা-বাবা বিয়োগ হলে তাঁরা শ্রাদ্ধশান্তি, শান্তি স্বস্ত্যয়ন , ও আত্মীয় বন্ধু পরিজনকে মোচ্ছব করে না খাইয়ে সেই অর্থ দিয়ে ভালোপাহাড়ের আদিবাসী শিশুদের পেট ভরে খাওয়ান। সেখানেই নাকি তাঁদের মা-বাবার পরলোকগত আত্মার সবচেয়ে শান্তি হয়। আজকের দিনে এমন মানুষেরা সত্যি আছেন? কমলদা আমাদের আচ্ছন্ন করে রাখলেন। সেই থেকে ভেবেই চলেছি অহোরাত্র। পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত পাহাড়ী এলাকার শিশুরা পাহাড়ের পাকদন্ডী পথ ধরে হেঁটে স্কুলে আসতে পারতনা বলে দুটি বাসের ব্যবস্থা করেছেন স্টেট ব্যাঙ্ক। আর কি চাই আমাদের! কোথায় ভোটের কাজিয়া? কোথায় স্বার্থ সংঘাত? কোথায় আত্মতুষ্টি? মাটি আর মানুষকে আঁকড়ে আছেন আমাদের সকলের প্রণম্য কমলদা!




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন